
ছবি: সংগৃহীত
গত কয়েক বছরে ‘স্লিপ ডিভোর্স’ বা স্বামী-স্ত্রীর আলাদা ঘুমানোর ধারণা বেশ আলোচিত হয়েছে। অনেক দম্পতির জন্য একসঙ্গে ঘুম সবসময় মধুর বা শান্তিপূর্ণ নয়। কিন্তু যদি সত্যিই আপনার সঙ্গী সাথে না থাকলে ঘুমাতে অসুবিধা হয়?
এটা অনেকের ক্ষেত্রে ঘটে, বিশেষ করে যারা তাদের সঙ্গীকে হারিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং RAND কর্পোরেশনের বয়স্ক আচরণ ও সামাজবিজ্ঞানী ড. ওয়েন্ডি ট্রোক্সেল বলেন, ‘কিছু কারণ সরাসরি সঙ্গীর সাথে সম্পর্কিত, আবার কিছু কারণ আপনার ঘুমের রুটিনের সাথে জড়িত, যা সঙ্গী থাকলে হয়তো ঘুমের জন্য বেশি উপযোগী।’
তিনি বলেছেন, ‘অনেকেই দম্পতির আলাদা ঘুমানোর ব্যাপারে কথা বলে, কিন্তু এর অন্য দিকটি অনেক সময় বাদ পড়ে যায় — কেন অনেক দম্পতি একসঙ্গে ঘুমাতে পছন্দ করে এবং কেন মানুষের মধ্যে ঘুমানোর সময় সঙ্গীর কাছাকাছি থাকার এক ধরনের মানসিক আকর্ষণ থাকে।’
ঘুমানোর সময় সঙ্গীর শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ, তাদের শরীরের ওজন ও উষ্ণতা এবং নিরাপদ থাকার অনুভূতি বিশেষ করে নারীদের জন্য মানসিক প্রশান্তি দেয়, যা ভালো ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয়।
‘আমাদের মস্তিষ্ককে ঘুমাতে হলে নিরাপদ এবং নিশ্চিন্ত বোধ করতে হয়। আর সঙ্গীর সাথে থাকার অভ্যাস, নিয়মিত রুটিন এই অনুভূতিকে জোরদার করে,’ বলেন ট্রোক্সেল।
আলিঙ্গন, হাত ধরে থাকা বা ঘুমানোর আগে সেক্স করার ফলে অক্সিটোসিন নামে সুখদায়ক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
ঘুমের রুটিনের একটি অংশ হয়ে ওঠে সঙ্গী, যা শরীরের ঘুমের বায়োলজিক্যাল সাইকেলকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের অনুপস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি মানসিক চাপ বাড়াতে পারে।
করণীয় কী?
নিউইয়র্কের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডা. জোশুয়া টাল বলেন, ‘কেউ কেউ হয়তো একা ঘুমানোর দক্ষতা অর্জন করতে চান, যদিও তারা সঙ্গীর সঙ্গে ঘুমাতে পছন্দ করেন।’
তবে স্বতন্ত্রভাবে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া দরকার। কয়েক রাত খারাপ ঘুম হলেও ধৈর্য ধরুন।
ঘুমের সুবিধার্থে আপনি করতে পারেন—
- হালকা স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম, ধ্যান, গরম শাওয়ার (হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল), অ্যারোমাথেরাপি বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম যেমন প্রগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন, ৪-৭-৮ শ্বাস-প্রণালী ইত্যাদি।
- সঙ্গীর ছবি বা তাদের গন্ধযুক্ত কোনো কাপড় পাশে রাখা, যেমন তাদের পুরানো শার্ট বা কোলোনিয়ার গন্ধ যুক্ত বালিশ।
- শরীরের ওজন অনুভব করতে বডি পিলো (কোল বালিশ) ব্যবহার করা।
- সঙ্গীর শ্বাসের আওয়াজের অভাব অনুভূত হলে পাখা বা হোয়াইট নয়েজ মেশিন চালানো।
কিছু দম্পতি আলাদা ঘুমান, বিশেষ করে যখন তাদের ঘুমের অভ্যাস ভিন্ন হয়। যেমন, আপনি সকালে ওঠেন আর আপনার সঙ্গী রাত জেগে থাকেন — তখন সঙ্গী আপনাকে ঘুমানোর আগে আলিঙ্গন করে যেতে পারেন, তারপর নিজে শান্তি করে আলাদা ঘুমাতে পারেন।
আসবাবপত্র বা ম্যাট্রেসের ব্যাপারেও ভিন্ন পছন্দ থাকলে আলাদা কম্বল বা দুইটি ভিন্ন ম্যাট্রেস যুক্ত করা যেতে পারে।
কিছু দম্পতির রাতে ফোন করে শুভরাত্রি জানানো অভ্যাস থাকে, কিন্তু কিছু মানুষের জন্য এটি বেদনাদায়ক হতে পারে যদি এটি বিচ্ছেদের অনুভূতি বাড়ায়। নিজের জন্য কাজ করে এমন পন্থা খুঁজে বের করুন।
অবশ্যই, ভালো ঘুমের জন্য সবসময় যেসব নিয়ম মানা উচিত, যেমন—
- ঘুমানোর আগে অনেক দেরি খাবার, ক্যাফেইন বা মদ পান না করা,
- শীতল, অন্ধকার এবং শান্ত পরিবেশ রাখা,
- নিয়মিত একই সময়ে ঘুমানো ও ওঠার চেষ্টা করা।
সঙ্গী থাকলেও এসব অভ্যাস মেনে চললে আপনার ঘুম আরও ভালো হবে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।
রাকিব