
ছবি: সংগৃহীত
মাছ—পৃথিবীর অন্যতম পরিচিত ও প্রিয় প্রাণী। অথচ কখনো কি ভেবে দেখেছেন, অন্যান্য প্রাণীর মতো মাছের কোনো জবান বা কণ্ঠস্বর নেই কেন? এবং কেনই বা মাছকে মৃত অবস্থাতেও খাওয়া হালাল করা হয়েছে, যেখানে অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে জবাই করা বাধ্যতামূলক? এই প্রশ্নের একটি চমকপ্রদ জবাব দিয়েছেন হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু)।
এক ব্যক্তি হযরত আলী (রা.)-কে প্রশ্ন করেন, “হে আলী! পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীর তো জবান রয়েছে, কিন্তু মাছের নেই কেন? আর মাছ কেন কেবল পানিতেই বাস করে?” জবাবে হযরত আলী (রা.) বলেন, এক সময় মাছেরও জবান ছিল এবং তারা কথা বলতে পারতো। কিন্তু তারা নিজেদের উপর জুলুম করার কারণে মহান আল্লাহ তাদের জবান কেড়ে নিয়েছেন এবং স্থলচলার ক্ষমতাও বাতিল করে দিয়েছেন।
কী সেই জুলুম?
হযরত আলী (রা.) বিস্তারিতভাবে পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ইবলিস যখন আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সিজদা করতে অস্বীকার করে, তখন আল্লাহ তাকে বিতাড়িত করে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেন। পৃথিবীতে এসে ইবলিস বিভিন্ন প্রাণীকে কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। সে সর্বপ্রথম কুমন্ত্রণা দেয় মাছকে।
ইবলিস মাছকে বলে, “মানুষ পৃথিবীতে এসে জুলুম করবে, নিরীহ প্রাণীদের ধরে ধরে কেটে খাবে, তোমাদের জীবিত অবস্থাতেও টুকরো করে খাবে।”
সেই সময় মাছরা কেবল পানিতেই নয়, স্থলেও চলাচল করতে পারতো এবং কথাও বলতে পারতো। ইবলিসের এই কথা শুনে মাছেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং সমুদ্রের অন্যান্য প্রাণীদের মধ্যে মানুষের বিরুদ্ধে এইসব ভয়ানক ভবিষ্যদ্বাণী প্রচার করতে শুরু করে। তারা সবাইকে একত্রিত করে মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলতে থাকে।
এই অতিরিক্ত ভয় এবং ষড়যন্ত্র-মূলক আচরণকে মাছদের নিজেদের উপর জুলুম হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে আল্লাহ তাআলা তাদের কথা বলার ক্ষমতা কেড়ে নেন এবং স্থলে চলার সামর্থ্যও বাতিল করে দেন। সেই থেকে মাছেরা শুধু পানিতে বসবাস করে এবং তারা আর কথা বলতে পারে না।
মাছ কেন মৃত অবস্থায় হালাল?
এই ঘটনার পর আল্লাহ তাআলা মাছের জন্য একটি বিশেষ বিধান জারি করেন। তিনি বলেন, মাছকে জবাই করার প্রয়োজন নেই। তারা জীবিত বা মৃত, যেকোনো অবস্থায় খাওয়া হালাল। অন্যদিকে অন্যান্য প্রাণীকে মৃত অবস্থায় খাওয়া হারাম, এবং তাদের অবশ্যই আল্লাহর নামে জবাই করতে হবে।
এটাই সেই ব্যতিক্রম, যেখানে মাছের জন্য বিশেষ রহমত ও বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, আল্লাহর হুকুম ও হিকমত কত বিস্ময়কর এবং প্রতিটি সৃষ্টির পেছনেই আছে এক গভীর তাৎপর্য।
ফরিদ