
উত্তরাঞ্চলের সবুজে ঘেরা জেলা ঠাকুরগাঁও। এখানকার প্রাণ কৃষি, আর কৃষকের হাত ধরেই পাল্টে যাচ্ছে জীবনের মানচিত্র। বরেন্দ্রভূমির ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এই জেলা, যেখানে কৃষি শুধু জীবিকা নয়, আত্মমর্যাদারও প্রতীক।
ঠাকুরগাঁওয়ের বড় খ্যাতি—ধান ও আলু চাষ। সদর উপজেলার আকচা গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এই এলাকার মাটিতে আলুর ফলন ভালো হয়। বাজার দর ঠিক থাকলে এক বিঘা জমি থেকে খরচ বাদে ২৫-৩০ হাজার টাকাও লাভ হয়।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ঠাকুরগাঁওয়ে প্রায় ১৮,০০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ রপ্তানিযোগ্য।
শুধু ফসল নয়, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে ডেইরি ও পোলট্রি খামার। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ত্রিমোহনী গ্রামের তরুণ খামারি আল-আমিন শুরু করেছিলেন মাত্র ৩টি গরু দিয়ে। এখন তার খামারে আছে ২২টি গরু ও ৩৫০টি লেয়ার মুরগি। তিনি বলেন, “সরকারি ট্রেনিং পেয়ে আমি খামারের ধারণা পেয়েছি। এখন নিজের বাড়িতেই ৪ জন মানুষের কাজ হচ্ছে। চাই আরও সাপোর্ট।”
এ জেলার কৃষকরা এখন ড্রিপ ইরিগেশন, কম্পোস্ট সার, এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহারেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তবে সমস্যা একটাই বাজার ব্যবস্থাপনা।অনেক সময় দাম পড়ে গেলে কৃষক বাধ্য হয় লোকসানে বিক্রি করতে।
স্থানীয় কৃষিবিদদের মতে, "ঠাকুরগাঁওয়ে হিমাগার ও কোল্ড চেইন অবকাঠামো তৈরি করা গেলে আলু ও দুধ সংরক্ষণ করে সারা বছর বাজারে সরবরাহ সম্ভব।"
নারীরা এখন শুধু সহায়কের ভূমিকায় নেই, তারা নিজেই উদ্যোক্তা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শাহানাজ বেগম বলেন, “আমরা ৭ জন মিলে একটি পোলট্রি ফার্ম দিয়েছি। এখন নিজের ঘরেও আয় করছি, ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও চালাচ্ছি।”
ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি যেমন উর্বর, এখানকার মানুষ তেমনি পরিশ্রমী। তাদের ঘামেই তৈরি হচ্ছে অর্থনীতির ভিত। প্রয়োজন শুধু আধুনিক প্রশিক্ষণ, সহজ ঋণ সুবিধা, আর ফসলের ন্যায্যমূল্য। তাহলে একদিন এই জেলা শুধু দেশেই নয়, বিশ্ব বাজারেও পরিচিত হবে “কৃষির রাজধানী” নামে।
আঁখি