
ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকার নেভাদা মরুভূমিতে একটি নতুন ধরনের ভূ-তাপীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। এখানে প্রায় ১.৫ মাইল গভীর দু’টি গর্ত খোঁড়া করা হয়েছে, যেখানে পাথরের ভেতর তাপমাত্রা ছিল ৩৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। এরপর এইগুলোর মধ্যে প্রায় ৩,২৫০ ফুট দীর্ঘ একটি অনুভূমিক সুড়ঙ্গ তৈরী করা হয়েছে।
প্রকৌশলীরা একদিকে উচ্চ চাপে পানি প্রবাহিত করে গরম পাথরের ফাটল থেকে তাপ সংগ্রহ করেন, এরপর গরম পানি অন্য দিক থেকে বের হয়ে আসে, যার তাপমাত্রা প্রায় ৩৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এই গরম পানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২৩ সালের শেষে চালু হয় এবং গুগলের নেভাদা ডেটা সেন্টারকে চালানোর জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। হিউস্টনের ফার্ভো এনার্জি কোম্পানি এখন অন্তত তিনটি ভূ-তাপীয় প্ল্যান্ট তৈরি করার পরিকল্পনা করছে।
ভূ-তাপীয় শক্তি রাতদিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যা বায়ু ও সৌর শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যতম সেরা সংযোজন। বিশেষ ব্যাপার হলো, পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা লবণাক্ত এবং লোহা মিশ্রিত গলিত মগ্না হাজার কোটি বছর তরল থাকবে, যার ফলে এই শক্তি নিরবচ্ছিন্ন ও সীমাহীন।
বিশ্বব্যাপী ভূ-তাপীয় শক্তি বর্তমানে বিশ্বের মাত্র ০.৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, কিন্তু প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে এর পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। গবেষকরা বলছেন, পৃথিবীর মোল্টেন কোর থেকে নির্গত মাত্র ছোট অংশই বিশ্বের বিদ্যুতের বিশাল চাহিদা পূরণ করতে পারবে।
ফার্ভোর প্রযুক্তি ফ্র্যাকিং পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে, যা তেল ও গ্যাস উত্তোলনে ব্যবহার হয়। তবে এখানে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে পৃথিবীর অভ্যন্তরের গরম ব্যবহার করা হয়। পানি গরম পাথরের মধ্যে দিয়ে গিয়ে তাপ সংগ্রহ করে, তারপর সেই গরম পানি দিয়ে অন্য পানি উত্তপ্ত করে বাষ্প তৈরি হয়, যা টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। এই গরম পানি আবার পুনরায় ভূগর্ভে পাঠানো হয়, ফলে সিস্টেমটি সম্পূর্ণ বন্ধ লুপে কাজ করে।
অন্যান্য ভূ-তাপীয় প্ল্যান্টের থেকে এটি আলাদা, কারণ ফার্ভোর প্রযুক্তিতে গভীর ৬ মাইল ড্রিল করার পরিবর্তে অনুভূমিক পাইপলাইন ব্যবহৃত হয়, যা কম গভীরেও কার্যকর।
বিশ্বের ভূ-তাপীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সাধারণত প্লেট টেকটনিক অ্যাক্টিভ জায়গায় যেমন আইসল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও নিউজিল্যান্ডে থাকে, যেখানে আগ্নেয়গিরির তাপ সহজে পাওয়া যায়। আইসল্যান্ডের প্রায় ৯০ শতাংশ ঘর ভূ-তাপীয় শক্তিতে চলে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (MIT) স্পিনঅফ ‘কোয়াইস এনার্জি’ একটি নতুন ড্রিল ডিজাইন করেছে, যা ১২.৪ মাইল গভীরে ড্রিল করতে পারবে, যেখানে তাপমাত্রা প্রায় ৯৩২ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকবে। এটি মিলিমিটার-ওয়েভ রশ্মি ব্যবহার করে পাথর গলিয়ে ড্রিলিং করবে।
বর্তমানে ফার্ভো একটি নতুন প্ল্যান্ট তৈরি করছে ইউটাহে, যা নেভাদার ছোট টেস্ট প্ল্যান্টের থেকে ১০০ গুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। নতুন এই প্লান্টে প্রতি ঘণ্টায় ৪০০-৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এটি প্রায় ৪ লক্ষাধিক গড় পরিবারের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রের Department of Energy (DOE) এর তথ্য অনুযায়ী, মাত্র পৃথিবীর ভূ-স্তরের ২ শতাংশ ভূ-তাপীয় শক্তি ধরে নিলে, তা দেশের বার্ষিক মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ২,০০০ গুণ পূরণ করতে সক্ষম হবে। DOE এর পরিকল্পনা ২০৫০ সালের মধ্যে ৬০ গিগাওয়াট ভূ-তাপীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা।
অতএব, ভূ-তাপীয় শক্তি ভবিষ্যতের পৃথিবীর অগ্রণী শক্তির উৎস হতে পারে।
মুমু