
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
প্রতিবছরের মতো এ বছরও আজ থেকে ৩ মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে সুন্দরবনের দুয়ার "১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট" পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশসহ সাধারণ মানুষের চলাচলেও থাকবে নিষেধাজ্ঞা,বন্ধ থাকবে সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের পাস-পারমিট। ২৪ এপ্রিল থেকে সপ্তাহ জুড়ে বিষয়টি নিয়ে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকাগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে।
প্রতিবছর সরকারী ভাবে সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ এবং বনে প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ইতোমধ্যে গহীন সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরেছেন সুন্দরবনের উপরে নির্ভরশীল জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালরা। স্থানীয় বিশ্লেষক মতে সুন্দরবনের পড়ের ৮৫ শতাংশ মানুষ সুন্দরবনের উপরে নির্ভরশীল নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে কর্মহীন হয়ে পড়ে এ জনপদের অধিকাংশ মানুষ, তিনবেলা খেতে পারে না তারা। আজ থেকে কিভাবে চলবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নির্ভরশীলরা। কীভাবে সংসার চালাবেন, তা নিয়ে উদ্বেগ বিরাজ করছে তাদের মধ্যে।
আব্দুল হামিদ গাজী নামের এক বনজীবী বলছেন, সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণ করেই তাদের সংসার চলে। তিন মাস সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় করা টাকাও নেই। বন্ধের দিনগুলোয় তাদের জন্য সরকারি যে সহায়তা দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় সামান্য।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী ও কোবাদক স্টেশন রয়েছে। আর এসব স্টেশনের আওতায় ২ হাজার ৯০০টি নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) রয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শ্যামনগরে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২৩ হাজার ৯২৮ জন। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সরকারি সহায়তার চাল পাবে মাত্র ৮ হাজার ৩২৪ জন। এসব জেলেকে ৩ মাসে দুই ধাপে ৭৭ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার ফলে সুন্দরবনে ওপর নির্ভরশীল পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৫০ হাজারেরও বেশি বনজীবী ও ট্রলার চালক বেকার হয়ে পড়বে
সুন্দরবন পাড়ের বাসিন্দা বনজীবী মাসুম বিল্লাহ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে তিন বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না। মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কোনো মতে বেঁচে থাকা ছাড়া আর উপায় নেই।
একই কথা বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাতিনাখালী গ্রামের বাসিন্দা শামিম হোসেনের গেল কয়েকদিন সুন্দরবন মাছ ধরার কাজে গিয়েছিল নিষেধাজ্ঞা কথা শুনে লোকালয়ে এসেছেন, যা উপার্জন করেছে তা দিয়ে কোন রকম ১ মাস চলতে পারবে তার পরের ৬০ দিন সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় করা টাকা নেই।
বনজীবী নারী উন্নয়ন সংস্থা নির্বাহী পরিচালক শীফালী বেগম বলেন আসলে আমাদের জেলেদের কষ্ট ও হয় আবার সুন্দরবনের একটু বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। তবে নিয়ম চলে আসছে অনেক বছর আগে থেকে।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোলীনী স্টেশন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, সুন্দরবনের বন্য প্রাণীসহ নদী-খালের মাছের বিচরণ ও প্রজনন এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জুন থেকে পরবর্তী তিন মাস সুন্দরবন পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। এ সময়ে কোনো পর্যটক বা বনজীবী প্রবেশ করতে পারবেন না।
নোভা