ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ড নয়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে এগিয়ে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩১ মে ২০২৫; আপডেট: ০৫:৪৯, ৩১ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে হার্ভার্ড নয়, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে এগিয়ে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ও ট্রাম্প প্রশাসনের চলমান আইনি লড়াই যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। হার্ভার্ডের বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি ঠেকাতে ফেডারেল কর্তৃপক্ষকে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

বিতর্কের সূচনা হয় যখন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ (ডিএইচএস) হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি ক্ষমতা বাতিলের হুমকি দেয়। ডিএইচএস সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোমের নেতৃত্বে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হার্ভার্ড পাল্টা আইনি পদক্ষেপ নেয়, অভিযোগ তোলে যে, আইন অনুযায়ী ৩০ দিনের নোটিশ না দিয়েই সিদ্ধান্তটি কার্যকর করা হয়েছে।

এরপর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয় যখন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর পরিচালক টড লায়নস হার্ভার্ডকে চিঠি দিয়ে জানায়—ইহুদিবিদ্বেষ এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগে ৩০ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান, বলেন, ‘হার্ভার্ডের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তারা নিজেদের পক্ষে সবচেয়ে সুবিধাজনক বিচারককে খুঁজে পেয়েছে।’

তবে এই আলোচনায় হার্ভার্ড একা নয়। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ—বহুমাত্রিক সংস্কৃতি, গবেষণা সক্ষমতা ও আর্থিক অবকাঠামোতে তাদের অবদান বিপুল।

কারা সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিচ্ছে?

ন্যাশনাল সেন্টার ফর এডুকেশন স্ট্যাটিস্টিকস (NCES) এবং কার্নেগি ক্লাসিফিকেশনের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় মোট শিক্ষার্থীর ২৮ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেয়, যেখানে অন্যান্য বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুযোগ অনেক বেশি। যে ১০টি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর হার সবচেয়ে বেশি (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে)—

তালিকায় রয়েছে:

এছাড়া, বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিতে শতাংশ হিসেবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • ক্যালটেক (৩২%)
  • ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো (৩১%)
  • বোস্টন ইউনিভার্সিটি (৩০%)
  • এমআইটি (৩০%)
  • ইউএসসি (২৮%)
  • ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ইন সেন্ট লুইস (২৮%)
  • ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া (২৭%)
  • ব্র্যান্ডেইস ইউনিভার্সিটি (২৭%)

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক স্থিতিশীলতায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভূমিকা অপরিসীম। হার্ভার্ড-ট্রাম্প সংঘাতে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও উদ্বিগ্ন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ এখন ঝুঁকিপূর্ণ।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে ১.১ মিলিয়ন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ৪৩.৮ বিলিয়ন ডলার যুক্ত করেছেন। এ খাতে প্রায় ৩.৮ লাখ চাকরি সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা মার্কিনদের তুলনায় গড়ে ১.৫ গুণ বেশি টিউশন ফি দেন, যা দেশীয় শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাব্যয় হ্রাসে সহায়ক বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের গবেষণা প্রধান মিরকা মার্টেল।

যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা জটিলতা ও নীতিগত অনিশ্চয়তার মধ্যে হংকং, জাপানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

হংকং সরকার ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (HKUST), সিটি ইউনিভার্সিটি (CityU), এবং দ্য চাইনিজ ইউনিভার্সিটি (CUHK)-কে নির্দেশ দিয়েছে, যাতে তারা মার্কিন সংকটে পড়া শিক্ষার্থীদের সহায়তা, স্কলারশিপ এবং ভর্তি সহজ করে দেয়।

জাপানও এগিয়ে এসেছে। টোকিও ও কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এমনকি যাদের জাপানি ভাষা দক্ষতা নেই তাদের জন্যও ব্যবস্থা থাকছে।

অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, এমনকি চীনও ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও চাকরির সুযোগ দিয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের নতুন গন্তব্যে পরিণত হতে চাচ্ছে।

২০২৫ সালে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক নির্বাহী আদেশ ও তহবিল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘নৈতিক পক্ষপাত’ রোধ এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ জোরদারে উদ্যোগ নেন।

তিনি ‘ডাইভার্সিটি, ইক্যুইটি অ্যান্ড ইনক্লুশন’ (DEI) কর্মসূচিকে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কায় অভিযুক্ত করে এসব প্রোগ্রামে তদন্ত শুরু করেন। এর ফলে কলাম্বিয়া ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কর্মসূচি কমিয়ে আনে; কলাম্বিয়া ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সরকারি অনুদান হারায়।

এছাড়া গবেষণা খাতে জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের (NIH) ব্যয়সীমা কমানো, বিদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি আরোপ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিলুপ্তির হুমকিতে দেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয় গভীর সংকটে পড়েছে। এমআইটি, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি (NYU), ও হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে আর্থিক চাপে রয়েছে।

হার্ভার্ড আইনি লড়াইয়ে নামলেও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চুপচাপ নীতিমালার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। ফলে, দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের সাংস্কৃতিক ও নীতিগত পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

 

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

×