
ছবিঃ সংগৃহীত
হামাস যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত গাজা যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনার জবাবে জানিয়েছে, তারা ১০ জন জীবিত ও ১৮ জন মৃত ইসরায়েলি জিম্মিকে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত, তবে এর বিনিময়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিমুক্তির পাশাপাশি পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন চায়।
হামাস জানায়, তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে সম্পূর্ণ ইসরায়েলি প্রত্যাহার এবং অবিচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তার নিশ্চয়তা চায় — যা মার্কিন প্রস্তাবনায় নেই।
তবে এটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান ছিল না, আবার সম্পূর্ণ গ্রহণও নয়। ওয়াশিংটনের দাবি অনুযায়ী, ইসরায়েল ইতোমধ্যে এই পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের খসড়া প্রস্তাবের জবাব দিয়েছে।
উইটকফ বলেন, “হামাসের জবাব সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য এবং এটি আমাদের পেছনে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই সপ্তাহেই আলোচনা শুরু করতে পারি, যদি হামাস আমাদের প্রস্তাবিত কাঠামো মেনে নেয়।”
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর জানায়, “ইসরায়েল আমাদের জিম্মিদের মুক্তির জন্য আপডেটকৃত উইটকফ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে, তবে হামাস এখনও প্রত্যাখ্যানের অবস্থানে রয়েছে।”
হামাস, যাকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বলেছে তারা “স্থায়ী যুদ্ধবিরতি” ও গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর “সম্পূর্ণ প্রত্যাহার” চায়।
তারা জানায়, তারা ১০ জন জীবিত ও ১৮ জন মৃত জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত, যদি নির্ধারিত সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিমুক্তি এবং মানবিক সহায়তার প্রবাহ নিশ্চিত করা হয়।
তবে হামাস এখন যুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে কঠিন ও জটিল অবস্থানে পড়েছে। গাজায় ২২ লাখ মানুষের অভূতপূর্ব মানবিক সংকট এবং মধ্যস্থতাকারীদের চাপের মুখে তারা এমন একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারছে না, যা আগের প্রত্যাখ্যাত প্রস্তাবগুলোর চেয়েও কম অনুকূল।
মার্চ মাসে হামাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খালিল আল-হাইয়া বলেছিলেন, সংগঠন আংশিক কোনো চুক্তি মেনে নেবে না যা স্থায়ীভাবে যুদ্ধের অবসান নিশ্চিত করে না।
এদিকে, ইসরায়েল নতুন করে গাজায় অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং হামাসের সামরিক শক্তি তা প্রতিহত করার মতো নয়। এই জটিল বাস্তবতায়, হামাস মার্কিন প্রস্তাবের সরাসরি জবাব না দিয়ে একটি নতুন পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে।
প্রস্তাবিত মার্কিন পরিকল্পনার মূল পয়েন্ট (অননুমোদিত):
৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি
প্রথম সপ্তাহে ২৮ জন ইসরায়েলি জিম্মি (জীবিত ও মৃত) মুক্তি
স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর আরও ৩০ জন মুক্তি
১,২৩৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দিমুক্তি ও ১৮০ জন মৃতদেহ হস্তান্তর
জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে গাজায় মানবিক সহায়তা
এই শর্তগুলো ইসরায়েল গ্রহণ করতে পারে, তাই হোয়াইট হাউজ প্রস্তাবনা দেওয়ার আগে তাদের সম্মতি নিয়েছে। তবে নেতানিয়াহু হামাসের চাওয়া অনুযায়ী চুক্তি সংশোধনের জন্য আলোচনায় আগ্রহী নন। তিনি বলেন, জিম্মিদের মুক্তির জন্য তিনি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি মানতে রাজি, কিন্তু ইসরায়েলের যুদ্ধ অব্যাহত রাখার অধিকার থাকবে।
নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধ তখনই শেষ হবে যখন হামাস অস্ত্র নামিয়ে রাখবে, সরকার থেকে সরে যাবে এবং নেতারা গাজা ত্যাগ করবে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ আরও কঠোর ভাষায় বলেন, “হামাসকে এখন বেছে নিতে হবে — উইটকফ চুক্তি মেনে জিম্মি মুক্তি দাও, অথবা ধ্বংস হয়ে যাও।”
হামাসের কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেন, উইটকফের সঙ্গে তারা পূর্বে একটি প্রস্তাবে সম্মত হয়েছিলেন, কিন্তু ইসরায়েলি জবাবে সেই সব শর্ত মানা হয়নি। তিনি প্রশ্ন করেন, “প্রতিবার ইসরায়েলের জবাবই কেন আলোচনার একমাত্র ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়? এটা পক্ষপাতমূলক ও অযৌক্তিক।”
শনিবার গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৬০ জন নিহত ও ২৮৪ জন আহত হয়েছেন। তবে উত্তর গাজা অঞ্চলের হাসপাতালে তথ্য সংগ্রহ কঠিন হওয়ায় প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে প্রায় ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়। এরপর ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৪,৩৮১ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৮ মার্চের পর থেকে ৪,১১৭ জন নিহত হয়েছেন।
সূত্রঃ বিবিসি
নোভা