সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী মে মাস পালিত হয় থাইরয়েড সচেতনতা মাস (Thyroid Awareness Month)"হিসেবে এবং প্রতিবছর ২৫ মে তারিখে পালিত হয় বিশ্ব থাইরয়েড দিবস (World Thyroid Day)"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০ কোটিরও বেশি মানুষ থাইরয়েডজনিত রোগে আক্রান্ত, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি) এবং হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ততা)-এ ভুগছেন।
এই পরিস্থিতিতে থাইরয়েড সচেতনতা বাড়ানো এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা।
American Thyroid Association জানিয়েছেন, থাইরয়েড সমস্যাকে নীরব ঘাতক বলা হয় কারণ এটি ধীরে ধীরে শরীরের বিপাক ক্রিয়া, মানসিক স্বাস্থ্য, ঘুম, ওজন এবং প্রজনন ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। অনেক সময় রোগীরাও বুঝতে পারেন না যে তারা এই সমস্যায় ভুগছেন।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই দুটি রোগের কারণেই শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া, মানসিক স্বাস্থ্য, ওজন, ঘুম এবং প্রজনন ক্ষমতায় মারাত্মক প্রভাব পড়ে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ বলেন: “থাইরয়েড রোগ সময়মতো শনাক্ত করা গেলে এবং সঠিক ডায়েট ও জীবনধারা অনুসরণ করলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।”
হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোন কম) – করণীয় খাদ্যাভ্যাস
খেতে হবে:
- আয়োডিন: আয়োডাইজড লবণ, সামুদ্রিক মাছ
- সেলেনিয়াম: ব্রাজিল নাট, ডিম, সূর্যমুখীর বীজ
- জিংক: মাংস, দুধ, কুমড়ার বীজ
- ফাইবার ও শর্করা: ওটস, বাদামি চাল
- প্রোটিন: ডিম, মাছ, ডাল
এড়িয়ে চলুন:
- কাঁচা বাঁধাকপি, ব্রোকলি, সয়াবিন (গোয়াইট্রোজেনজাত খাবার)
- অতিরিক্ত সয়া প্রোডাক্টস ও প্রসেসড খাবার
- অতিরিক্ত চিনি ও চর্বি
হাইপারথাইরয়েডিজম (হরমোন বেশি) – খাদ্য নির্দেশনা
খেতে হবে:
- ক্রুসিফেরাস সবজি : বাঁধাকপি, ফুলকপি – হরমোন উৎপাদন কমায়
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: বেরি, বিটরুট, টমেটো – কোষ সুরক্ষায় সহায়ক
- ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন D: দুধ, ডিম, রোদে থাকা – হাড় সুরক্ষায়
- প্রোটিন ও ফাইবার: হরমোন ব্যালেন্সে সহায়ক
এড়িয়ে চলুন:
- অতিরিক্ত আয়োডিন
- ক্যাফেইন (চা, কফি, এনার্জি ড্রিঙ্কস)
- মসলাযুক্ত খাবার ও ফাস্টফুড
সাধারণ স্বাস্থ্য পরামর্শ:
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান
- নিয়মিত ব্যায়াম, ঘুম এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে যোগ বা মেডিটেশন
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ
- খাদ্য পরিকল্পনার ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ গ্রহণ
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, থাইরয়েড সমস্যা মানেই জীবন থেমে যাওয়া নয়। বরং "নিয়মিত চিকিৎসা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সচেতনতা একজন থাইরয়েড রোগীকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারে।
অতএব, থাইরয়েড বিষয়ে সময়মতো পরীক্ষা, উপসর্গ সম্পর্কে সচেতনতা এবং জীবনধারায় সামান্য পরিবর্তনই হতে পারে স্বাস্থ্য রক্ষার চাবিকাঠি।
হ্যাপী
