ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চীনের মাইক্রোচিপ বিপ্লব: হুয়াওয়ে ও শাওমির অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের কপালে চিন্তার ভাঁজ

প্রকাশিত: ০১:১০, ১ জুন ২০২৫; আপডেট: ০১:১০, ১ জুন ২০২৫

চীনের মাইক্রোচিপ বিপ্লব: হুয়াওয়ে ও শাওমির অগ্রযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের কপালে চিন্তার ভাঁজ

ছবিঃ সংগৃহীত

বছরের পর বছর সেমিকন্ডাক্টর বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন প্রযুক্তির এই খাতে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে, যার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে হুয়াওয়ে ও শাওমির মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা।

যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ থেকে যাত্রা শুরু
২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার ফলে হুয়াওয়ে ও শাওমির মতো কোম্পানিগুলো কোয়ালকম কিংবা ইন্টেলের মতো মার্কিন কোম্পানির উন্নত যন্ত্রাংশ ব্যবহারে বাধার সম্মুখীন হয়। লক্ষ্য ছিল—চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত নেতৃত্ব ধরে রাখা।

কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো। এসব বাধা চীনের জন্য রূপ নিয়েছে সুযোগে। সরকার বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে গবেষণা, প্রশিক্ষণ এবং দেশীয় চিপ উৎপাদনে। যদিও এখনো তাদের তৈরি চিপগুলো তাইওয়ান কিংবা কোরিয়ার ৩ বা ৫ ন্যানোমিটার চিপের তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে, তবে এগুলোর কৌশলগত গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

হুয়াওয়ে ও শাওমি: চীনের প্রযুক্তি পুনর্জাগরণের নেতৃত্বে
চীনের প্রযুক্তিগত পুনর্জাগরণের প্রধান দুই মুখ হুয়াওয়ে ও শাওমি। হুয়াওয়ে নিজস্ব কিরিন ৯০০০এস প্রসেসর তৈরি করে চমক সৃষ্টি করেছে, যা ‘মেট ৬০ প্রো’ স্মার্টফোনে ব্যবহৃত হয়েছে। এই চিপ তৈরি হয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান এসএমআইসি’র কারখানায়, যা প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ সত্ত্বেও চীন অভ্যন্তরীণভাবে উন্নত চিপ তৈরি করতে সক্ষম।

শাওমিও পিছিয়ে নেই। তারা নিজেদের তৈরি সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করছে ক্যামেরা ও পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইউনিটে। যদিও এগুলো এখনো অ্যাপল কিংবা কোয়ালকমের সর্বশেষ চিপের সমমানের নয়, তবুও এগুলো চীনের প্রযুক্তি স্বনির্ভরতার এক বিশাল অগ্রগতি।

বিদেশী প্রযুক্তি নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার পথ
চীন এখন বিকল্প প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছে। তারা নিজস্ব জাতীয় মানদণ্ড গড়ে তুলছে এবং RISC-V এর মতো ওপেন আর্কিটেকচারে কাজ করছে, যা পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণাধীন ARM বা x86-এর চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীন। চীনের এই অগ্রগতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান গঠন, স্থানীয় ফাউন্ড্রি যেমন SMIC-এ বিনিয়োগ, মেশিন প্রস্তুতকারকদের সহায়তা এবং রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং উৎসাহিত করার মধ্য দিয়ে সম্ভব হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ক্রমবর্ধমান
এই অগ্রগতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগ বাড়ছে। অনেক বিশ্লেষণ বলছে, আগামী দশকের মধ্যে চীন এমন অবস্থানে পৌঁছাতে পারে যেখানে তাদের আর বিদেশি সরবরাহকারীদের উপর নির্ভর করতে হবে না উন্নত চিপ তৈরির জন্য। এতে বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।

চীন এখনো সেমিকন্ডাক্টর যুদ্ধ পুরোপুরি জয় করতে পারেনি, কিন্তু এটা স্পষ্ট যে—যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ তাদের থামাতে পারেনি, বরং উদ্ভাবনের জন্য আরও বেশি উদ্দীপনা জুগিয়েছে। হুয়াওয়ে ও শাওমি কেবল দুটি কোম্পানি নয়, বরং চীনের প্রযুক্তি পুনর্জাগরণ কৌশলের প্রতীক। এবং এবার, যুক্তরাষ্ট্র জানে—এই জবাব বাস্তব এবং প্রতিযোগিতামূলক।

সূত্রঃ https://farmingdale-observer.com/2025/05/30/united-states-wondered-how-china-had-made-such-progress-in-the-field-of-microchips-huawei-and-xiaomi-are-the-answer-with-massive-development/

ইমরান

×