ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘উসকানিমূলক আচরণ’: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাকিস্তানের

প্রকাশিত: ০১:১৬, ১ জুন ২০২৫; আপডেট: ০১:৩১, ১ জুন ২০২৫

ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘উসকানিমূলক আচরণ’: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পাকিস্তানের

ছবি: প্রতীকী

পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, ভারতের ভেতরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃত উসকানি’ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির লঙ্ঘন। শনিবার (৩১ মে) দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য, বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ এবং রাষ্ট্রীয় মদদে যে নিপীড়ন চলছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকত আলী খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো ও রাজনৈতিক ফায়দার জন্য মুসলিমদের টার্গেট করা মানবাধিকার চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতজুড়ে ইসলামবিদ্বেষী ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। আমরা ভারতের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন সব ধর্মের নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।’

ভারতের নয়া দিল্লিভিত্তিক সিভিল রাইটস সংস্থা APCR জানিয়েছে, গত ২৭ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত মাত্র ১২ দিনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ১৮৪টি ঘৃণামূলক অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। এসব ঘটনায় কমপক্ষে ৩১৬ জন ব্যক্তি শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ঘটনাগুলোর মধ্যে ছিল—৮৪টি ঘৃণামূলক ভাষণ, ৬৪টি ভয়ভীতি প্রদর্শন, ৪২টি হয়রানি, ৩৯টি শারীরিক সহিংসতা, ১৯টি ভাঙচুর, ১৪টি হুমকি, ৭টি মৌখিক নির্যাতন এবং ৩টি হত্যাকাণ্ড।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, পেহালগামের হামলাকে কেন্দ্র করে ১৮৪ ঘটনার মধ্যে ১০৬টির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সর্বোচ্চ হামলার ঘটনা ঘটেছে উত্তর প্রদেশে, এরপরই আছে বিহার, মহারাষ্ট্র, উত্তরাখণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গ।

APCR বলেছে, ‘এই ঘৃণামূলক ঘটনার ধরন বলছে—এটি কেবল স্থানীয় নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ের বিরূপ মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।’

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতের সামাজিক মাধ্যমে এমন গান ছড়ানো হচ্ছে, যেখানে মুসলিমদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলা হচ্ছে এবং তাদের বয়কট করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। অন্তত ২০টি গানে স্পষ্ট ইসলামবিদ্বেষী বার্তা রয়েছে।

এদিকে, পাকিস্তানের সঙ্গে সংযোগ থাকার অভিযোগে ভারতের পক্ষ থেকে ধরপাকড়ও চলছে। এমনকি সমালোচনামূলক মন্তব্যের জন্যও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে ব্যক্তিদের।

গত ১৮ মে হরিয়ানার অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক আলী খান মাহমুদাবাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ, তিনি ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনার সময় সেনা সংক্রান্ত ব্রিফিং নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন।

পরে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তাকে জামিন দেন এবং তার বক্তব্যের তদন্তে একটি বিশেষ পুলিশ টিম গঠনের নির্দেশ দেন।

 

তথ্যসূত্র: দ্য ডন।

রাকিব

×