
ছবিঃ সংগৃহীত
বর্তমানে স্ট্রোক বা ব্রেইন স্ট্রোক একটি সাধারণ এবং ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে এটি মৃত্যুর কারণ হতে পারে কিংবা রোগী আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, স্ট্রোক মূলত দুই ধরনের — ইস্কেমিক স্ট্রোক ও হেমোরেজিক স্ট্রোক।
ইস্কেমিক স্ট্রোক কী?
ইস্কেমিক স্ট্রোক ঘটে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হলে। এটি সাধারণত রক্তনালিতে চর্বি জমে বা রক্ত জমাট বাঁধার কারণে হয়, ফলে মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছায় না।
চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, এমন স্ট্রোকের রোগীরা প্রায়ই রাতে ঘুমানোর সময় সুস্থ থাকেন, কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ দেখেন তাদের এক পাশের হাত বা পা অবশ হয়ে গেছে, দুর্বল লাগছে, হাঁটতে পারছেন না বা কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে রোগীর অবস্থা ইস্কেমিক স্ট্রোক হতে পারে বলে ধরে নেওয়া হয়।
হেমোরেজিক স্ট্রোক কী?
অন্যদিকে, হেমোরেজিক স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হলে। এটি অনেক বেশি বিপজ্জনক এবং জীবনঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।
এই ধরণের স্ট্রোকের লক্ষণগুলো সাধারণত খুব তীব্র হয়। হঠাৎ কাজ করতে করতে রোগী প্রচণ্ড মাথাব্যথা অনুভব করেন, বমি করেন, এবং শরীরের এক পাশ অচল হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে যেসব রোগীর উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে এবং নিয়মিত ওষুধ খান না, তাদের এই ঝুঁকি বেশি থাকে। এই অবস্থাকে চিকিৎসকেরা বলেন "সাডেন সিভিয়ার হেডেক", যা হেমোরেজিক স্ট্রোকের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
কীভাবে বুঝবেন কোন ধরনের স্ট্রোক?
চিকিৎসকেরা রোগীর লক্ষণ ও ইতিহাস শুনেই প্রাথমিকভাবে আন্দাজ করতে পারেন স্ট্রোকটি কোন ধরনের। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সিটি স্ক্যান (CT Scan) বা এমআরআই (MRI) করা প্রয়োজন।
উপসর্গ ও সম্ভাব্য স্ট্রোকের ধরন
ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ দুর্বলতা, অবশ ভাব হলে তা ইস্কেমিক স্ট্রোক
হঠাৎ মাথাব্যথা, বমি, ব্লাড প্রেশার হাই হলে তা হেমোরেজিক স্ট্রোক
করণীয়
স্ট্রোকের ক্ষেত্রে "টাইম ইজ ব্রেইন"— যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যায়, তত বেশি মস্তিষ্ককে রক্ষা করা সম্ভব। উপসর্গ দেখা দিলেই দেরি না করে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং নিউরো মেডিসিন বা নিউরোসার্জনের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিরোধে যা করতে হবে:
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
ধূমপান ও মাদক থেকে বিরত থাকা
নিয়মিত ব্যায়াম করা
ওষুধ নিয়মিত খাওয়া
স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব, যদি সচেতনতা ও নিয়ম মেনে চলা যায়। নিজের প্রতি যত্নবান হোন, নিজের এবং পরিবারের জীবন রক্ষা করুন।
নোভা