
ছবি:জনকণ্ঠ
আজ শনিবার (৩১ মে) অনুষ্ঠিত হবে দেশের পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে এবার ৩৫ পরিচালক পদে লড়ছেন ৭৬ জন প্রার্থী।
নির্বাচন কেন্দ্রিক দুই জোট ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৬ জন। তবে মূল লড়াই হবে দুই প্যানেলের মধ্যেই। এদের মধ্যে আলোচনা রয়েছেন ফোরামের প্রার্থী দ্বিতীয় প্রজন্মের তিন উদ্যোক্তা।
তারা হলেন দেশের শীর্ষ পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি আলহাজ্ব খলিলুর রহমানের ছেলে সেলিম রহমান, এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফোরাম বাংলাদেশের সভাপতি আবদুস সালামের ছেলে সাকিফ আহমেদ সালাম এবং ইভেন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরীর (পারভেজ) ছেলে শাহ্ রাঈদ চৌধুরী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৭ মে ফোরামের প্যানেল পরিচিতি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বাবার সঙ্গে ফটোসেশন করেন এই তিন উদ্যোক্তা। এরপর এসব ছবি ছড়িয়ে পড়ে ব্যবসায়িক অঙ্গনে। সৃষ্টি হয় আলোচনা।
চট্টগ্রামের পোশাক মালিক ও বিজিএমইএর সদস্যরা জানান, দেশের নামকরা প্রতিষ্ঠিত এই তিন ব্যবসায়ী শুধু তাদের ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছেন বিষয়টি এমন নয়। পাশাপাশি তারা তাদের সন্তানদেরও যোগ্য করে গড়ে তুলেছেন। পড়ালেখা করিয়েছেন দেশ-বিদেশের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অর্জন করেছেন ব্যবসার সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি। যে কারণে দ্বিতীয় প্রজন্মের এসব উদ্যোক্তারা এখন ব্যবসায়িক অবদানে উজ্জ্বল করছেন দেশের নাম। নেতৃত্ব দানের গুণাবলীও তাদের মধ্যে রয়েছে। ফলে তারা নির্বাচিত হলে তারুণ্য ভিত্তিক সৃজনশীল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বিজিএমইএতেও প্রতিফলিত হবে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খলিলুর রহমান ও ইভেন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। তবে এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তাঁর ব্যালট নম্বর দুই। এছাড়া আলোচিত দ্বিতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তা কেডিএস গার্মেন্টস ইন্ড্রাস্টিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমান ফোরামের প্যানেল লিডার হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তার ব্যালট নম্বর ২৭। আর আলোচিত দ্বিতীয় প্রজন্মের আরেক উদ্যোক্তা ফ্যাশন ওয়াচ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ আহমেদ সালাম নির্বাচন করছেন ব্যালট নম্বর ৩১ নিয়ে। দ্বিতীয় প্রজন্মের আলোচিত আরেক উদ্যোক্তা ইভিটেক্স ড্রেস শার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ রাঈদ চৌধুরীর ব্যালট নম্বর ১১।
জানা গেছে, ৩৩ বছর আগে পোশাক শিল্পে জড়িত হয়েছিলেন আবদুস সালাম। যিনি এখন সবার কাছে পরিচিত দেশের সেরা রপ্তানিকারক এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাম হিসেবে। বর্তমানে তার ২১টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে কাজ করছেন ২৫ হাজারেরও কর্মী। বিজিএমইএর নির্বাচনে এবারই প্রথম নয় আব্দুস সালামের, এর আগে তিনি চারবার পালন করেছেন প্রথম সহ-সভাপতির দায়িত্ব। ৯ বার নির্বাচিত হয়েছেন বিজিএমইএর পরিচালক হিসেবেও। কাজ করেছেন আনিসুর রহমান সিনহা, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, এসএম ফজলুল হক, কাজী মনিরুজ্জামান, আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) ও ডা. রুবানা হকের সঙ্গে। ছিলেন চট্টগ্রাম এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।
আবদুস সালাম বলেন, নির্বাচিত হলে প্রকৃত রপ্তানিকারকদের বিজিএমইএতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে কাজ করবো। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর জিএসপি প্লাস প্রাপ্তিতে শিল্পকে প্রস্তুত করা ও বিভিন্ন দেশের সাথে FIA/PTA প্রতিষ্ঠায় সরকারের সাথে কাজ করা থাকবে আমার প্রধান প্রাধান্য। প্রতিটি নির্বাচিত প্যানেল মেম্বারদের ৫০টি করে ফ্যাক্টরির সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দিবো। শিল্পজোন ভিত্তিক ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেল প্রতিষ্ঠা করব।
জানা গেছে, কেডিএস গার্মেন্টস ইন্ড্রাস্টিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমানের বিদ্যালয়ের পাঠদান হয়েছে ভারতে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের সাউদার্ন মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে সম্পূর্ণ করেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। আধুনিক ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা পরিচালনায় এটি তাকে সহযোগিতা করেছে। তিনি কেডিএস গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব শুরুর পর থেকেই আমেরিকা, জাপান, চীনসহ বিশ্বের সব দেশে নামিদামি ব্রান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পরিচিত করার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশের কাপড় বিশ্ববাসীর কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে অসামান্য অবদানের জন্য অসংখ্যবার পেয়েছেন জাতীয় রপ্তানি ট্রফি, অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও। ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক। এছাড়া তিনি চট্টগ্রামসহ সারাদেশের অসংখ্য সংগঠন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
সেলিম রহমান বলেন, আগে আমি বহুবার নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছি। একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে দেশীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সব সময় চেষ্টা করেছি ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু করার। নির্বাচনে প্রার্থীরা আমার ব্যালটে রায় দিলেই কাজ করার পরিধি আরও বাড়ানো সম্ভব। কারণ বর্তমানে ব্যবসায়ীরা নানা সংকটে জর্জরিত। এসব সমস্যা দূর করতে প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্বের। আমাকে ভোট দিলে আমি কাউকে হতাশ করব না।
সাকিফ আহমেদ সালাম দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান এশিয়ান গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ও অর্থনীতিতে (ডাবল মেজর) পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফিরে ব্যবসার হাল ধরেছেন। দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে গার্মেন্টসশিল্পের সাথে জড়িত তিনি। বিশিষ্ট শিল্পপতি এমএ সালামের বড় ছেলে সাকিফ সালাম। চট্টগ্রাম চেম্বারে টানা দু’বার পরিচালক নির্বাচিত হন। কাজ করে যাচ্ছেন সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পর্ষদ নির্বাচনে ফোরাম প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা। একই প্যানেল থেকে নির্বাচন করছেন বাবা আবদুস সালামও।
সাকিফ আহমেদ সালাম বলেন, বাবা মোহাম্মদ আব্দুস সালাম সাহেবের কাছ থেকে শিখেছি- কর্মঠতা, স্বচ্ছতা ও সদস্যদের পাশে থাকার গুরুত্ব। আমি সেই শিক্ষা এবং নিজের অর্জিত অভিজ্ঞতা একত্র করে দায়িত্বশীল, প্রযুক্তিনির্ভর ও উদ্ভাবনী নেতৃত্ব দিতে চাই। আমি চাই সদস্যরা বিজিএমইএ-কে তাদের সমস্যার সমাধানদাতা হিসেবে দেখুক। আমি চাই এসএমইদের জন্য থাকবে সহজতর ব্যাংক ঋণপ্রাপ্তি, বন্ড সুবিধা, কমপ্লায়েন্স ফান্ড, ট্রেনিং স্কিম এবং লজিস্টিক সাপোর্ট। এসবের মাধ্যমে তারা নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি করে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে। চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য উপযোগী নীতি তৈরি ও বাস্তবায়নে কাজ করব।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের পেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে ২০১৩ সালে বিবিএ সম্পূর্ণ করেন শাহ্ রাঈদ চৌধুরী। এরপর ২০১৪ সালে দায়িত্ব নেন ইভিটেক্স ড্রেস শার্ট লিমিটেডের। বাংলাদেশের বাজারে দুর্দান্তভাবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ইভিন্স গ্রুপের নিজস্ব পোশাক ব্রান্ড ‘নোয়াহ’। ২০১৮ সালে তার হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান রিটেইল চেইন ‘মিনিসো’। যা বিশ্বের ১১০টি দেশ ও সাড়ে ৭ হাজার স্টোরের মধ্যে শীর্ষ ১০০টির একটি হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে।
শাহ্ রাঈদ চৌধুরী বলেন, অগ্রসদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের আলোকে, অনুজদের তারুণ্য ওর সাহসিকতার সমন্বয় ঘটিয়ে শিল্পকে অদূর ভবিষ্যতে আরো গতিশীল এবং অগ্রগামী করবো। গার্মেন্টস শিল্পের প্রযুক্তিগ উৎকর্ষতায় গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের লক্ষ্যে টেকসই, পরিবেশবান্ধব উপায়ে পণ্য উৎপাদন করা এবং প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে পণ্য কাস্টিমাইজেশনের জীবনকাল উন্নত করাই হবে আমার লক্ষ্য।
আঁখি