ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সুন্দরবনে প্রবেশে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা, সজিবতা ফিরবে প্রাণ-প্রকৃতিতে

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ১৫:৪৯, ১ জুন ২০২৫

সুন্দরবনে প্রবেশে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা, সজিবতা ফিরবে প্রাণ-প্রকৃতিতে

ছবিঃ জনকণ্ঠ

মাছ ও বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি, বিচরণ এবং প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় সুন্দরবনে টানা তিন মাসের জন্য দর্শনার্থী ও বনজীবিদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। রবিবার (১ জুন) থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এই বনের দুয়ার। এতে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতিত আরও সতেজতা হবে বলে বন বিভাগ আশা করছে।


বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী হরিণ, বানর, কুমির, গুইশাপসহ ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর এবং বিভিন্ন প্রকার মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী, ২৯০ প্রজাতির পাখি ও ৩৪৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে মধ্যে দুই প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং পাঁচ প্রজাতির স্তন্যপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে দর্শনার্থীদের ভীড়, বনজীবিদের কর্মযজ্ঞ ও চোরা শিকারিদের দাপটে আরও বেশি সংকটে পড়ে এসব প্রাণ-প্রকৃতি।


এসব প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বন বিভাগ। নিষেধাজ্ঞার ফলে ফলে বনের অভ্যন্তরে নদী-খালের মাছসহ সকল প্রাণীদের প্রাণীদের অবাধ বিচরণ ও প্রজনন বৃদ্ধির জন্য রবিবার (০১ জুন) থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে বনজীবী ও দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। একসাথে ৯০ দিনের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সুন্দরবনে মাছসহ সকল প্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তবে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে বন বিভাগকে নজরদারি জোরদার করছে। 


শরণখোলা উপজেলার বন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে এই সময় বৈধভাবে কেউ প্রবেশ করবে না। তবে অবৈধভাবে অপরাধীদের প্রবেশ ঠেকানোই এখন চ্যালেঞ্জ। যদি অপরাধীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা যায়, তাহলে বন বিভাগের উদ্দেশ্য সফল হবে। আমরা যারা বনজীবী রয়েছি তারাও লাভবান হব।’


এদিকে পরিবেশকর্মীরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সময় বন বিভাগের কতিপয় অসাধু ব্যক্তিদের যোগসাজশে এক শ্রেণির জেলেরা বনের মধ্যে প্রবেশ করে মাছ আহরণ করে। নিষেধাজ্ঞার সময় যাতে কেউ বনে প্রবেশ না করতে পারে এজন্য বন বিভাগের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা‘র সদস্য নূর আলম শেখ।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন আমাদের মায়ের মত। তবে সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট যে-সব অপরাধ হয়ে থাকে এগুলো মানুষই করে। আর সুন্দরবন রক্ষার দায়িত্বও কোনও না কোনো মানুষের। রক্ষার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদেরকে আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে বন রক্ষায়।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করীম চৌধুরি বলেন, এই সময় স্বাভাবিকের তুলনায় টহল বৃদ্ধি করা হবে। নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে সুন্দরবনে প্রাণিকুল ও মৎস্য ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে।’


তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের নদ-নদীতে থাকা বেশিরভাগ মাছ ও জলজ প্রাণীর প্রজনন মৌসুম জুন-জুলাই মাস। এই সময় আমরা যদি বনকে কোলাহলমুক্ত রাখতে পারি, তাহলে বন্য প্রাণীদের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে।’
ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ থাকত। পরে ২০২২ সালে মৎস্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে ০১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এই সময়ে কাজ হারানো জেলেদের মৎস্য অধিদপ্তর থেকে খাদ্য সহায়তা করা হয়ে থাকে।

সাব্বির

×