ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা: পাহাড়ের সবুজ অরণ্যে সৌন্দর্যের চূড়ায় ‘মাতাই পুখির’

হাবিবুর রহমান সুজন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ০১:২৮, ৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ০১:২৯, ৩ জুন ২০২৫

পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা: পাহাড়ের সবুজ অরণ্যে সৌন্দর্যের চূড়ায় ‘মাতাই পুখির’

ছবি: সংগৃহীত

সমুদ্র সমতল থেকে উঁচু-নিচু পথ পেরিয়ে ৭০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই ‘মাতাই পুখির’, যার বাংলা অর্থ ‘দেবতা পুকুর’। মাতাই অর্থ ‘দেবতা’ আর পুখির অর্থ ‘পুকুর’। এই পুকুরে থৈ থৈ করছে স্বচ্ছ পানি। এমনটা আপনার কাছে কল্পনা হলেও পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়িতে এটাই বাস্তবতা।

উঁচু পাহাড়ে পানি জমানো দুষ্কর, কষ্টসাধ্য এবং ব্যয় সাপেক্ষে হলেও, পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ সৃষ্টির মাধ্যমে পানি সংরক্ষণের নজির থাকলেও ‘দেবতা পুকুর’ সেসব থেকে ব্যতিক্রম। পৃথিবীর অনেক আশ্চর্যের মধ্যে আপনার কাছে ‘দেবতা পুকুর’ হতে পারে অন্যরকম এক ধরনের আশ্চর্য।

‘দেবতা পুকুর’ রূপকথার দেবতার আশির্বাদের মতোই স্রোতহীন সঞ্চার। পাহাড়ের চূড়ায় এ পুকুরটির স্বচ্ছ জলরাশির মনভোলা প্রশান্তি মুহূর্তের মধ্যে পর্যটকদের উদাসীন করে তুলতে পারে। এ দেবতা পুকুরকে ঘিরে রয়েছে পাহাড়ের পর্যটন সম্ভাবনা।

খাগড়াছড়ি জেলা সদর খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে মূল সড়ক থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে নুনছড়ি মৌজার আলুটিলা পর্বতশ্রেণী থেকে সৃষ্ট ছোট্ট নদী নুনছড়ি। নুনছড়ির সমতল ভূমি থেকে প্রায় এক হাজার ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় ‘দেবতা পুকুর’। সবুজ অরণ্যবেষ্টিত দেবতা পুকুরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ ফুট এবং গড় প্রস্থ ৬০০ ফুটের মতো। সময়ের ব্যবধানে ‘দেবতা পুকুর’ স্থানীয় ত্রিপুরাদের তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে দেবতা পুকুরে বসে তীর্থ মেলা এবং তান্ত্রিক বিধান মতে ত্রিপুরাগণ যাগযজ্ঞাদি করে এখানে।

ত্রিপুরা অধ্যুষিত এলাকায় এর অবস্থান বলে এটি ত্রিপুরা ভাষায় ‘মাতাই পুখির’ নামেই অধিক পরিচিত। পুকুরের চারিদিকে ঘন সবুজ অরণ্য যেন সৌন্দর্যের দেবতা বর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কথিত আছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের জলতৃষ্ণা নিবারণের জন্য স্বয়ং জলদেবতা এ পুকুর খনন করেছেন।

দেবতা পুকুরের পানি কখনোই শুকায় না। পুকুরের পানিকে স্থানীয় পাহাড়িরা দেবতার আর্শীবাদ বলে মনে করেন। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, দেবতা পুকুর দেবতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং পুকুরের তলদেশে গুপ্তধন লুকায়িত আছে যা দেবতারা পাহারা দিচ্ছে। প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিতে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজারো নারী-পুরুষ-শিশু দেবতা পুকুর দর্শনে হাজির হয়।

পাহাড়ের পাদদেশ ১ হাজার ৩৮৬টি সিঁড়ি বেয়ে দেবতা পুকুরে পৌঁছাতে হয়। সিঁড়ি বেয়ে প্রায় ২৫ মিনিটের পথ পেরুলেই দেখা মিলবে স্বপ্নের দেবতা পুকুরের। সিঁড়ি নির্মাণের আগে প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লাগতো দেবতা পুকুরে পৌঁছাতে। দেবতা পুকুরে যাবার পথে দেখতে পাবেন ১৫ ফুট উচ্চতার একটা জলপ্রপাত। যার শনশন পানির শব্দ আপনাকে বিমোহিত করবে।

পুকুরের পাশেই গড়ে উঠেছে একটি শিব মন্দির। মন্দিরের দায়িত্বে আছেন একজন পুরোহিত। দেবতা পুকুরে আসা পূজারিরা পুকুরে গোসল সেরে পুজো দেন। পূজারিদের বিশ্বাস এখানে পুজো দিলে সবধরনের মনোবাসনা পূরণ হয়।

যেভাবে যাবেন

খাগড়াছড়ি জেলা সদর খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি। মাইসছড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে নুনছড়ি যেতে হবে। চাঁদের গাড়ি (জিপ) বা সিএনজিতে যেতে পারেন নুনছড়ি। মোটরসাইকেলেও যেতে পারেন সেখানে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে পৌঁছাবেন দেবতা পুকুর। তবে পায়ে হাঁটার অভ্যাস থাকলে মাইসছড়ি থেকে দলবেঁধে পায়ে হেঁটে যেতে পারেন দেবতা পুকুর। এক্ষেত্রে বাড়তি আনন্দ পাওয়ার পাশাপাশি খরচও কমবে।

হাবিবুর রহমান সুজন/রাকিব

×