ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্লাস্টিক ছাড়াও চাষ সম্ভব! রাজশাহীর কৃষকদের বিস্ময়কর উদ্ভাবন

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী 

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ৪ জুন ২০২৫

প্লাস্টিক ছাড়াও চাষ সম্ভব! রাজশাহীর কৃষকদের বিস্ময়কর উদ্ভাবন

ছবি: জনকণ্ঠ

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রাজশাহীর পবা উপজেলার বিলনেপালপাড়া গ্রামে আয়োজিত মেলায় প্রদর্শন করা হয়েছে প্লাস্টিকমুক্ত হাজারো কৃষি উপকরণ।

বুধবার এ মেলার আয়োজন করে স্থানীয় কৃষিপ্রতিবেশ কেন্দ্র এবং উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক।

মেলায় পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের প্রায় ৪৫ জন কৃষক ও কৃষাণি তাঁদের ব্যবহৃত কৃষি উপকরণ প্রদর্শন করেন এবং নতুন প্রজন্মকে সেগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। মেলার মূল উদ্দেশ্য ছিল। প্লাস্টিক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা এবং প্লাস্টিকমুক্ত পরিবার গড়ে তোলা।

প্রদর্শিত প্লাস্টিকমুক্ত কৃষি ও গৃহস্থালি উপকরণের মধ্যে ছিল। মাথল, থলি, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম, গুমাই, সাব্বল, দাউলি, বেকি, কাতা, লিহান, ছুরি, কুপা, দা, কাঁচি, হাসা, ছোট-বড়-মাঝারি ডালি, নানা রকম কুরা, নিড়ানি, ডই, কারোল, শিকা, বাহুক, আম নামানোর ঝোপা, কাড়ল, পানি সেতো টবকা, ধান মাপার হাটা, খই চালা চালন, ঝাঁকা, সাজি, সরপেস, চাল ঝাড়ার কুলা ইত্যাদি।

স্থানীয় প্রবীণ কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, “একসময় ঘরে প্লাস্টিক ছিল না। ছিল মাটির হাঁড়ি-কলস, পিতলের থালা। বাজারে গেলে কাপড়ের তৈরি ব্যাগ সঙ্গে নিতাম। এমনকি কারও বাড়িতে বেড়াতে গেলেও পকেটে করে কাপড়ের থলি নিয়ে যেতাম। এখন ঘরে-বাইরে সবখানেই প্লাস্টিক।”

তিনি আরও বলেন, “একসময় নিড়ানি ছিল সাত-আট রকমের। যেমন ‘চাচানি’ দিয়ে পটল, করলা জাতীয় লতানো সবজিতে নিড়ানি দেওয়া হয়; ‘আঁকা’ দিয়ে পেঁয়াজ-রসুনে, ‘ভুকচা’ দিয়ে জমির ঘাস তুলি; ‘বেকি’ দিয়ে রসুন তোলাই। কোদালও বিভিন্ন রকমের ‘কামরি কোদাল’ দিয়ে বেশি পরিমাণে মাটি খোড়া যায়, ‘চিকন কোদাল’ আলুর জমিতে ব্যবহার করি, আবার ‘চায়না কোদাল’ সরু ড্রেন তৈরিতে উপযোগী।”

কৃষক লুৎফর রহমান (৫৫) মেলায় নিয়ে এসেছিলেন ১৮ ধরনের কৃষি উপকরণ। এর মধ্যে ছিল দুই ধরনের মাথল। তিনি বলেন, “বৃষ্টির দিনে ‘পইচা মাথল’ ব্যবহার করি, আর রোদে ‘দেশি মাথল’। এটা সবসময়ই কাজে লাগে।” কৃষাণি হিরামনি এনেছিলেন দুই ধরনের কুলা, রুটি তৈরির বেলুন, লাকড়ি, হাতুড়, দাউলি, বেকি, তিন ধরনের বটিসহ আরও নানা কিছু।

মো. রেজাউল করিম বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ঘরে, মাঠে, কৃষিকাজে আর কোনো প্লাস্টিক ব্যবহার না করা। আমরা চাইলে পারি প্লাস্টিক বাদ দিয়ে চলতে।”

মেলার ধারণাপত্র পাঠ করেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, “প্লাস্টিক মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, পোকামাকড় ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ে। মাইক্রোপ্লাস্টিক ফসলের মাধ্যমে খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নদী-জলাশয়েও এটি পৌঁছে জলজ পরিবেশকে বিষিয়ে তোলে। বর্তমানে ফলের বাগান, মালচিংসহ কৃষিক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। এটি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। তাই এখন থেকেই সতর্ক হতে এই আয়োজন।”

শহীদ

×