ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

শাহিদা জাহান ইরানী

প্রকাশিত: ১৮:২২, ৪ জুন ২০২৫

কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

পবিত্র ঈদুল আজহা আত্মত্যাগ, পরিচ্ছন্নতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতীক। কোরবানি শেষে সৃষ্ট বর্জ্য সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা আমাদের ধর্মীয় ও নাগরিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যেখানে কোরবানি আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়, সেখানে পরিচ্ছন্নতা সেই আত্মত্যাগকে পরিপূর্ণতা দেয়। প্রতি বছর দেখা যায়, অনেকেই পশু কোরবানির পর রক্ত, চামড়া, চাটাই, হাড়সহ অন্যান্য বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলে দেয়। ফলে শহরজুড়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়, পরিবেশ দূষণ হয় এবং বায়ু, পানি ও মাটির মতো মৌলিক উপাদানগুলো নষ্ট হতে থাকে। এই পরিস্থিতি রোধ করতে হলে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ সম্মত কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে করা হলে একদিকে পরিবেশ বিপর্যয় রোধ হবে, অন্যদিকে জবাইকৃত পশুর উচ্ছিষ্টাংশগুলো সম্পদে পরিণত করা সম্ভব হবে। যেমন নাড়িভুঁড়ি থেকে তৈরি করা যায় মাছের খাদ্য ও পশুখাদ্য, হাড় গুঁড়া করে তৈরি করা যায় জৈব সার, এমনকি ওষুধ শিল্পেও এগুলোর ব্যবহারযোগ্য। এসব বর্জ্য সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও রূপান্তর করা সম্ভব হলে তা পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি টেকসই অর্থনীতির ভিত্তি গড়তেও ভূমিকা রাখতে পারবে। কোরবানির আগেই বাড়ির পাশে মাঠ বা ফাঁকা জায়গায় একটি গর্ত খুঁড়ে রাখা উচিত। কোরবানির পর পশুর বর্জ্য সেখানে ফেলে মাটিচাপা দিলে দূষণ রোধ করা সম্ভব। শহরাঞ্চলে এই গর্ত খোঁড়ার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন গ্যাস, পানি কিংবা বিদ্যুৎ লাইনের কোনো ক্ষতি না হয়। গ্রামাঞ্চলে একাধিক পরিবার একত্রে কোরবানি করে বর্জ্য এক জায়গায় পুঁতে রাখলে তা জৈব সার হিসেবে কাজে লাগানো যায়, যা পরিবেশ ও কৃষির জন্য উপকারী। জবাইকৃত পশুর গোবর ও উচ্ছিষ্টাংশ অবশ্যই আলাদা করে পলিথিন বা ঢাকনা দেওয়া পাত্রে মুখবন্ধ অবস্থায় রাখতে হবে। কখনো খোলা অবস্থায় রাখা যাবে না, এতে রোগজীবাণু দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। কোরবানি দেওয়ার পর পশুর রক্ত দ্রুত ধুয়ে ফেলতে হবে এবং এ পানি যেন রাস্তা বা উঠোনে জমে না থাকে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। শহরে বসবাসরতদের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে কোরবানি না দিয়ে সম্মিলিতভাবে নির্ধারিত জায়গায় কোরবানি করা উত্তম। এতে করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পক্ষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সহজ হয়। কোরবানির জায়গাটি যেন খোলামেলা ও সড়কসংলগ্ন হয়, যাতে বর্জ্যবাহী গাড়ি সহজে প্রবেশ করতে পারে। বর্জ্য যাতে কুকুর বা বিড়াল টেনে আশপাশে ছড়িয়ে না দেয়, সে দিকেও সতর্ক থাকতে হবে। যেখানে গাড়ি পৌঁছাতে পারে না, সেখানে ব্যাগ বা বস্তায় করে বর্জ্য নির্ধারিত জায়গায় পৌঁছে দিতে হবে। সিটি করপোরেশন কিংবা পৌর কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিলে সুফল অনেক বেশি। এসব জায়গায় সরকার আগে থেকেই পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ব্লিচিং পাউডার, স্যাভলন এবং বর্জ্য অপসারণের যানবাহন প্রস্তুত রাখে। নগরবাসীকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। সম্মানিত কাউন্সিলরদের মাধ্যমে প্রচারপত্র বিতরণ, ইমামদের মাধ্যমে খুতবায় সচেতনতা বিষয়ক আলোচনা, জনসচেতনতামূলক শোভাযাত্রা, টেলিভিশন, রেডিও ও পত্রিকায় প্রচার জোরদার করতে হবে। এছাড়া ওয়ার্ডভিত্তিক মনিটরিং টিম গঠন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের প্রশিক্ষণ, কন্ট্রোল রুম স্থাপন, ব্লিচিং পাউডার বিতরণ, বর্জ্য রাখার ব্যাগ সরবরাহ ইত্যাদির ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে

প্যানেল

×