ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা, তিনজন গ্রেপ্তার

সাগর হোসেন, কুষ্টিয়া

প্রকাশিত: ১৮:২৬, ৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৮:২৭, ৪ জুন ২০২৫

নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা, তিনজন গ্রেপ্তার

ছবি: জনকণ্ঠ

জীবিকার সন্ধানে ২০২৪ সালে দালালের প্রলোভনে লিবিয়ায় পাড়ি জমান কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জয়নাবাদ চরপাড়া গ্রামের যুবক পলাশ ইসলাম (৩৫)। কিন্তু সেখানে গিয়ে জীবিকার পরিবর্তে তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়েন। তাকে নির্মমভাবে নির্যাতনের ভিডিও ও অডিও পরিবারে পাঠিয়ে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে।

এই দাবির প্রেক্ষিতে পলাশকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে অমানবিকভাবে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। স্বজনদের আতঙ্কিত করতে একের পর এক ভয়াবহ নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হচ্ছে।

এ ঘটনায় গত ১ জুন কুমারখালী থানায় তিনজনকে আসামি করে মামলা করেছেন পলাশের ভাই আব্দুর রহিম। মামলা দায়েরের পর র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ফেনী থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলায়মান শেখ বলেন, “ওই মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদের ফেনী থেকে আনতে কুমারখালী থানা পুলিশের একটি দল রওনা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত বলা যাবে।”

মামলার আসামিরা হলেন, নাজমা আক্তার (৩০), তার স্বামী আফসার হোসেন এবং মঈনুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আফসার হোসেন আগে থেকেই পলাশ ইসলামের পরিচিত ছিলেন এবং তিনি লিবিয়ায় অবস্থান করতেন। ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ আফসার পলাশকে লিবিয়া নেওয়ার জন্য ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর এক বছর দুই মাস কেটে গেলেও পলাশকে কোনো কাজ দেওয়া হয়নি।

বরং তাকে একটি অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে আফসার ও তার স্ত্রী নাজমা ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করতে থাকেন। টাকা না দেওয়ায় পলাশকে ভিডিও কলের মাধ্যমে মুখ, হাত-পা বেঁধে লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধর করা হয়। হাত-পায়ের আঙুলের নখ তুলে তার আর্তচিৎকারের অডিও পাঠানো হয় পরিবারের কাছে। ভিডিওতে দেখা যায়, তার সঙ্গে আরও তিনজনকে একইভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

এদিকে, নাজমা বিভিন্ন নম্বর থেকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছেন। পলাশের জীবন বাঁচাতে তৃতীয় আসামি মঈনুদ্দিনের ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে দেড় লাখ টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু বাকি টাকার জন্য বারবার ফোন করে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

আব্দুর রহিম বলেন, “আমি এখন ফেনীতে যাচ্ছি পুলিশের সঙ্গে। ফিরে এসে বিস্তারিত জানাতে পারব। আমরা যেকোনো মূল্যে আমার ভাইকে ফেরত চাই। তার সন্তানেরা দেশে বাবার পথ চেয়ে আছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, “র‌্যাব তিনজনকে আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। কুষ্টিয়া পুলিশের টিম এলে তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে।”

শহীদ

×