ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিঠাপুকুরের নিভৃত গ্রামে গড়ে উঠছে দেশের এক অনন্য যাদুঘর

হুমায়ুন কবীর মানিক, রংপুর

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ৪ জুন ২০২৫

মিঠাপুকুরের নিভৃত গ্রামে গড়ে উঠছে দেশের এক অনন্য যাদুঘর

ছবি: জনকণ্ঠ

যাদুঘর মানেই হারিয়ে যাওয়া প্রাচীনকালের জিনিসপত্র কিংবা ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক-বাহকের সংগ্রহশালা। এমনি এক সংগ্রহশালা ‘পল্লী যাদুঘর’ গড়ে উঠছে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার নিভৃত পল্লী এনায়েতপুরের ফকিরবাড়িতে। ট্রেনের আদলে তৈরি করা যাদুঘরে স্থান পেয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়া ষাট থেকে নব্বইয়ের দশকে ব্যবহৃত গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র।

হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস-ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পল্লী যাদুঘর গড়ে তোলার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন কবি আদিল ফকির। যিনি একজন সংস্কৃতিমনা ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনুসন্ধানী, শেকড় না ভোলা মানুষ।

দেখা গেছে, ফকিরবাড়ির পল্লী যাদুঘর যেন এক জীবন্ত ইতিহাসের সংগ্রহশালা। যেখানে রয়েছে ৩০ থেকে ৫০ বছর আগের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত ঢেঁকি, চুলা, হ্যাঁচাক, হারিকেন, তালপাতার পাখা, একতারা, টাকার সিন্ধুক, কলের গান, ডুগডুগি, রেডিও, পানের বাটা, কুপি, ভিসিডিআর, গরুর গাড়ি, যাতা, হুকাসহ ১৫৫ ধরনের বিলুপ্তপ্রায় জিনিসপত্র। এছাড়াও রয়েছে কয়েক দশকের প্রচলিত মুদ্রা ও ডাকটিকিটের সংগ্রহ।

এই সংগ্রহশালা গ্রামীণ সমাজজীবনের চিত্র, লোকচিত্র ও কৃষিভিত্তিক উপকরণ তুলে ধরছে নতুন প্রজন্মের কাছে। কয়েক একর জমিতে গড়ে ওঠা ফকিরবাড়ির পল্লী যাদুঘর ঘিরে রয়েছে ফকিরবাড়ির পাঠশালা, উন্মুক্ত পাঠাগার, সানবাঁধানো পুকুর ও বিভিন্ন জাতের বৃক্ষের সমাহার।

এই পরিসরকে আরও বড় আকারে নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন কবি আদিল ফকির। উদ্বোধনের আগেই দেশের সুনামধন্য লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ পল্লী যাদুঘর পরিদর্শন করেছেন। উদ্যোক্তা জানান, আগামী ২-৩ মাসের মধ্যেই এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

উদ্যোক্তা আদিল ফকির জানান, “২০০৪ সাল থেকে স্বপ্ন ছিল এমন কিছু করার। সেই চিন্তা থেকেই জন্মভিটার কথা মাথায় রেখে পল্লী যাদুঘরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। প্রচার শুরুর পরই ঢাকা থেকে কলের গান পেয়েছি। অনেকেই ফোন করে প্রয়াত স্বজনদের ষাট-সত্তরের দশকের সংরক্ষিত জিনিসপত্র আমাদের ঠিকানায় পাঠাচ্ছেন। সত্যি বলতে, উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া মিলছে।”

এ সময় তিনি তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে রংপুরের সাংবাদিক সমাজ, সুধী সমাজ ও দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন। ৬ নম্বর কাফ্রিখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল মাস্টার বলেন, “মিঠাপুকুরের নিভৃত পল্লী হিসেবে পরিচিত এনায়েতপুরে পল্লী যাদুঘর হচ্ছে। এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। ইতিহাসভিত্তিক এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ঈদের পর সরেজমিনে পরিদর্শন করবো।”

শহীদ

×