লালনপালনে মমতা

আত্মত্যাগের মহিমায় কোরবানি দিতে হয়। গরু কোরবানির জন্য সাধ্যমতে সুন্দর এবং নিখুঁত গরু দেখে কোরবানি দিতে হবে। তাই হাটে ঘুরে ঘুরে সাধ্যনুযায়ী সুন্দর গরুই পছন্দ করতে হবে। গরু কেনার পর গরুকে খুবই সাবধানে বাড়িতে আনতে হবে। তার ওপর কোন ধরনের জুলুম করা যাবে না। গাড়িতে আনা গেলে হাটিয়ে না আনাই ভালো। একটি গরু ঘরের চার দেয়ালে লালন-পালন করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো খামার থেকে গরুর জীবদ্দশায় এক বারের জন্যও বের করা হয় না। সে ক্ষেত্রে গরুকে হাট থেকে হাটিয়ে আনতে গেলে ভয়ে বিচলিত হয়ে এদিক সেদিক দৌড়ানোর চেষ্টা করে। অনেক সময় গরুর দড়ি ধরতে গিয়ে অনেককে আহত হতেও দেখেছি। তাই অনভিজ্ঞ লোকজনের গরুর দড়ি না ধরাই ভালো। গরু বাড়িতে এনে পর্যাপ্ত খাদ্য এবং পানীয় জল দিতে হবে। গরুর বেপারীদের পক্ষে হাটে একটি গরুকে যথেষ্ট পরিমাণে খাদ্য ও পানি দেওয়া সম্ভবপর হয় না। তবে গরু বাড়িতে এনে অতিরিক্ত কুড়া, ভূষি, খইল, খুদ খাওয়ানো যাবে না। তাতে গরুর পেট ফুলে মারা যেতে পারে। প্রতিটি গরুকে ১ কেজি কুড়া, খইল, ভূষি খাওয়াতে হলে তাকে আনুপাতিক হারে ৫ কেজি কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে। কাঁচা ঘাস বেশি খেলে গরুর কোনো ধরনের ক্ষতি হয় না। একটি গরু অপরিচিত স্থানে আসলে সে পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। তখন গরুটি এলোমেলো আচরণ করে থাকে। তার কারণে তাকে প্রহার করা বা অমানবিক আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মানবিক আচরণ দিয়ে গরুকে নির্ভয় দিতে হবে। তাতেই সে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে যাবে। আমরা অনেক সময় একটি গরুকে হাট থেকে নিয়ে আসার পর তাকে বাইরে বা জঙ্গলে রেখে দেই। তাতে মশা, মাছি এবং বিষাক্ত পোকামাকড়ে কামড়িয়ে থাকে। যা অত্যন্ত অমানবিক বলা চলে। তাই সেদিকেও যত্ন নেওয়াটা জরুরি। আর প্রতিদিনই গরুকে সকালে গোসল দিতে হবে। গরমের মধ্যে দুপুরে গরু গোসল করালে তাতে ঠান্ডা লাগে গরুর। কোরবানি দিনের আগেই গরু জবেহ করার জন্য ছুরি ধার দিয়ে রাখতে হবে। ছুরি যত বেশি ধারালো হবে জবেহ করার সময় ততই তার কষ্ট কম হবে। জবেহ করার সময় গরুর সঙ্গে অমানবিক আচার-আচরণ করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, গরু একটি অবলা জীব। তার কষ্ট-সুখ অনুভূতি আছে। তাই গরুকে শোয়ানোর সময় যথাযথ সাবধানে আস্তে করে শোয়াতে হবে। কোরবানির গরুর গোশত সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়াটার মধ্যেই আনন্দ। ঘরের ফ্রিজে মাসের পর মাস খাওয়ার জন্য কোরবানি নয়। এক টুকরো গোশতের জন্য অনেক এতিম বাচ্চা কাঁদে। তারা যাতে বঞ্চিত না হয় তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

রিকাবী বাজার, মুন্সীগঞ্জ থেকে