ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দেশে ফের করোনার সংক্রমণ, করণীয় নিয়ে সিলেটে সভা আজ

মোঃ এমদাদ হোসেন ভুঁইয়া, সিলেট।

প্রকাশিত: ১৮:১৭, ৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৮:২৪, ৪ জুন ২০২৫

দেশে ফের করোনার সংক্রমণ, করণীয় নিয়ে সিলেটে সভা আজ

দেশে আবারও করোনার সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফলে জনমনে দেখা দিচ্ছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগের দিন ও শনাক্ত হয়েছে ১৫ জনের।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার সংক্রমণ এতে আশংকার মুখে বাংলাদেশ । 

এই খবরে সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগও নড়েচড়ে বসেছে। এ নিয়ে করণীয় নির্ধারণে বুধবার (৪ জুন) জরুরি সভায় বসছে সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগ।

গত কয়েকদিন ধরে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে ৫ জুন থেকে শুরু হচ্ছে ঈদুল আজহার দীর্ঘ সরকারি ছুটি। এই অবস্থায় প্রাণঘাতি করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিয়ে বঞ্চিত হতে হবে এ অঞ্চলের মানুষদের ।

তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।

সিলেটের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. আনিসুর রহমান জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা আজ প্রস্তুতি সভায় বসছেন। এতে সিলেট অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। ঈদে স্বাস্থ্যসেবা নির্বিঘ্ন রাখতে দেশের হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৭ দফা নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

ডা. মো. আনিসুর রহমান বলেন, সিলেটে এখন পর্যন্ত কারো শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত না হলেও প্রবাসী অধ্যুষিত ওই অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতি ও সচেতনতার বিকল্প নেই। তিনি আরো জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা প্রতিপালনে তারা ইতোমধ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

নির্দেশনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ মনিটরিং করবেন। তিনি আরো জানান, করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী জানিয়েছেন, চিকিৎসা একটি জরুরি সেবা। এটা বন্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ওসমানী হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের সেবা ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকবে।

ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি থাকলেও ৫ ও ৯ জুন আউটডোরে দুই ঘণ্টা করে রোগী দেখা হবে। এছাড়া, ছুটির দিনগুলোতে চিকিৎসক এবং নার্সরা রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন।

পাশাপাশি ঈদের দিনে রোগীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত ১৭ দফা নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

লেবার রুম, ইমারজেন্সি ওটি, ল্যাব সার্বক্ষণিক চালু রাখা। কর্মস্থলে ঈদের আগে ও পরে সমন্বয় করে জনবলকে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়া। ছুটি শুরু হবার পূর্বেই ছুটিকালীন সময়ের জন্য পর্যাপ্ত ঔষধ, আইভি ফ্লুইড, কেমিক্যাল রি-এজেন্ট, সার্জিক্যাল সামগ্রী মজুদ ও তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহের ব্যবস্থা ও অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সার্বক্ষণিক চালু রাখা। পশুর হাটের নিকটবর্তী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিশেষ প্রস্তÍতি রাখা। বহি: বিভাগ একাধারে ৭২ ঘণ্টার অধিক বন্ধ না রাখা। যেকোন দুর্যোগ, অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুমকে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করা।

ঈদের দিন রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন ইত্যাদি।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় পরিচালক মো. আমান উল্লাহ জানিয়েছেন, ঈদ উল আজহার সরকারি ছুটির সময় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরাধীন কেন্দ্রসমূহে সেবা কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন মীর সাজেদুর রহমান গত ২ জুন এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পত্র প্রেরণ করেছেন। এ আলোকে তারাও প্রস্ততি নিয়েছেন বলে জানান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২২.৫০ শতাংশ।

এদিকে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও নতুন করে শনাক্ত হচ্ছে করোনাভাইরাস। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ক্রমেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তবে সেটা সীমিত পরিসরে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভারতে সংক্রমিত করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। যার কারণে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। করোনার নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি ভারত থেকে বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী আশপাশের দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। কেননা, ভারতে শনাক্ত হওয়ার কিছুদিন পর থেকে বাংলাদেশেও শনাক্ত হচ্ছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে চীন থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল। এরপর সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত ব্যক্তির কথা প্রথম জানা যায় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। দেশে প্রথম মৃত্যু ঘটে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ। এরপরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ৩ অঙ্কের মধ্যে ছিল, যা বাড়তে বাড়তে জুলাই মাসে সর্বোচ্চে পৌঁছেছিল। ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪০১৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দু-দিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান। পরে ধীরে ধীরে সারা বিশ্বের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে বাংলাদেশেও।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৯ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।

রিফাত

×