
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন বিশ্বের লাখ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। একটি গোপন নথি অনুসারে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট শিক্ষার্থীদের ও এক্সচেঞ্জ ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যাচাই জোরদার করতে চলেছে এবং এর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সাময়িকভাবে শিক্ষার্থী ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে।
এই উদ্যোগ মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো—বিশেষ করে হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানে—"অতিরিক্ত উদার" আচরণের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জিরো টলারেন্স নীতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হার্ভার্ড বনাম ট্রাম্প
ট্রাম্প হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করেছেন। হার্ভার্ড ইতিমধ্যে আদালতে মামলা করেছে এবং প্রাথমিকভাবে সেই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করা হয়েছে।
হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক অফিসের পরিচালক জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা চরম মানসিক চাপের মধ্যে আছেন। অনেকে সমাবর্তন বাতিল করছেন, আন্তর্জাতিক সফর বাতিল করছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন।
কোন দেশের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১.১ মিলিয়নের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করেছেন। তার মধ্যে ভারতের শিক্ষার্থী প্রায় ৩.৩ লাখ, চীনে প্রায় ২.৮ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে।
এরপর আছে দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ, ব্রাজিল ও নেপাল।
সর্বশেষ ঘোষণায়, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংযুক্ত শিক্ষার্থীদের ভিসা "বাতিল" করা হবে। একই সঙ্গে হংকংয়ের শিক্ষার্থীদের উপরেও নতুন নিয়ম কার্যকর হবে।
বিকল্প কোন দেশগুলো?
কানাডা
গত কয়েক বছরে কানাডা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:
ভিসার প্রমাণপত্র: কানাডা এখন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চ পরিমাণ অর্থ থাকার প্রমাণ চাইছে।
ভর্তির সীমা: বিভিন্ন প্রদেশ শিক্ষার্থীদের সংখ্যার ওপর সীমা নির্ধারণ করেছে যাতে স্থানীয়দের সুযোগ ক্ষুণ্ন না হয়।
বাসস্থানের নিশ্চয়তা: কিছু প্রদেশে, ভিসার জন্য আবেদনের আগে বাসস্থানের প্রমাণ দেখানো আবশ্যক।
❝নিয়ম কঠোর হলেও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো বিশ্বমানের এবং অভিবাসন-পরবর্তী সুযোগ অনেক দেশ থেকে ভালো।❞
যুক্তরাজ্য
অক্সফোর্ড, কেমব্রিজের মতো প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যকে বহু শিক্ষার্থীর স্বপ্নের গন্তব্য করে তুলেছে। তবে ২০২৪ সাল থেকে শুরু হওয়া নতুন অভিবাসন নীতিতে নতুন শিক্ষার্থীরা কোর্স শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্মভিসায় রূপান্তর করতে পারবেন না। পোস্টগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা আর তাদের পরিবারকে সাথে আনতে পারবেন না।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ডিগ্রি পেতে চাইলে যুক্তরাজ্য এখনো এক শক্তিশালী বিকল্প, তবে পারিবারিক পরিকল্পনা থাকলে নতুন সীমাবদ্ধতা মাথায় রাখতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়া উচ্চশিক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয়। কিন্তু বর্তমানে তারা অভিবাসন হ্রাসে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সীমিত করার নীতিমালা করেছে।
শিক্ষা ও কাজের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নতুন ভিসা কোটা এবং উচ্চ প্রুফ-অফ-ফান্ড নিয়ম শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করতে পারে।
হংকং ও মালয়েশিয়া
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি ঘোষণা করেছেন:
“যেসব শিক্ষার্থী মার্কিন নীতিতে সমস্যায় পড়েছে, তাদের স্বাগত জানানো হবে।”
স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সহায়তা ও দ্রুত ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করেছে।
মালয়েশিয়ার Sunway University ঘোষণা দিয়েছে:
তারা হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের ট্রান্সফার ক্রেডিট গ্রহণ করবে এবং ব্রিটিশ সার্টিফিকেশন (Lancaster University) এর সুযোগও দেবে।
পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এখন উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে, যা উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আরও সহজলভ্য ও অর্থনৈতিকভাবে টেকসই বিকল্প।
এছাড়াও ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইডেনের মতো দেশগুলোও গবেষণা ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করছে।
ইউরোপের অনেক দেশ বিনামূল্যে বা স্বল্প খরচে শিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে—বিশেষত STEM বিষয়ে।
আন্তর্জাতিক উচ্চশিক্ষার বাজারে পরিবর্তন
বিশ্ববিদ্যালয় কৌশলবিদ প্রফেসর উইলিয়াম ব্রুস্টেইন বলছেন, “হার্ভার্ড বেঁচে যাবে, তবে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো—যারা টিউশন ফি’র উপর নির্ভর করে—তারা চরম সংকটে পড়বে।” তিনি আরও বলেন, “এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এখন সবচেয়ে গতিশীল অঞ্চল, এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বড় ভূমিকা রাখতে পারে।”
মুমু