
ছবি: সংগৃহীত।
বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সঞ্চয়ের সেরা মাধ্যম কোনটি—তা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় ভুগছেন। কেউ বিনিয়োগ করছেন শেয়ারবাজারে, কেউ আবার সমবায় সমিতিতে। কেউ সফল হচ্ছেন, কেউ আবার পুঁজি হারিয়ে বিপদে পড়ছেন। এই বাস্তবতায় অনেকেই চাইছেন নিরাপদ ও লাভজনক জায়গায় টাকা রাখতে। প্রশ্ন উঠছে—এফডিআর নাকি সঞ্চয়পত্র, কোনটি বেশি লাভজনক ও নিরাপদ?
শেয়ারবাজার ও সমবায়ে ঝুঁকি বেশি
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে লাভের সম্ভাবনা থাকলেও তার সঙ্গে বড় ঝুঁকিও জড়িয়ে আছে। ভুল সিদ্ধান্ত বা বাজার ধসের কারণে পুঁজি হারানোর আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে, উচ্চ সুদের প্রলোভনে অনেকেই সমবায় সমিতিতে টাকা রাখেন। কিন্তু প্রতারিত হওয়ার ঘটনা এখানে নতুন কিছু নয়—সমবায় কর্মকর্তারা টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন, এমন খবর মাঝেমধ্যেই সংবাদ শিরোনাম হয়।
জমি কেনায় জটিলতা
একজন মধ্যবিত্ত বা চাকরিজীবীর জন্য জমি কেনাও সহজ নয়। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে নিষ্কণ্টক জমি শনাক্ত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতারণা বা দখল জটিলতায় পড়ে অনেকে চরম ক্ষতির মুখে পড়েন।
মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় এফডিআর লোকসানের মুখে
বর্তমানে অনেক ব্যাংক স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) বিপরীতে ৮ থেকে ১০ শতাংশ সুদ দিলেও, চলমান ৯–১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকৃত আয় অনেক সময় নেতিবাচক হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও অনেকেই এফডিআর করছেন শুধুমাত্র তারল্য সুবিধার কারণে—যখন ইচ্ছা টাকা ভাঙানো যায়।
তবে সব ব্যাংকের অবস্থান সমান নয়। যারা বেশি সুদ দিচ্ছে, তাদের আর্থিক অবস্থা দুর্বল বলেই ধরে নেওয়া হয়। ফলে সেই টাকাও ঝুঁকির মুখে থাকে।
সঞ্চয়পত্র: লাভজনক ও নিরাপদ?
সঞ্চয়পত্রের দিকে এখন অনেকেই ঝুঁকছেন, বিশেষ করে যাঁরা স্থিতিশীল আয়ের পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত আয় করতে চান। কারণ, এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং সুদহারও তুলনামূলকভাবে বেশি।
বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৯টি জাতীয় সঞ্চয় স্কিম রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি স্কিমে সম্প্রতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:
- ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র: ১২.৩৭%–১৩.৪০%
- ৩ মাস অন্তর মুনাফা প্রদান সঞ্চয়পত্র: প্রথম বছরে ১২.৩০%, পরবর্তীতে ১২.৫০%
- পারিবারিক সঞ্চয়পত্র: সর্বোচ্চ ১২.৫০%
- পেনশনার সঞ্চয়পত্র: সাড়ে সাত লাখ টাকার নিচে হলে ১২.৫০%, এর বেশি হলে ১২.৩৭%
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে ঝুঁকি প্রায় নেই বললেই চলে, কারণ এটি সরকারি গ্যারান্টিযুক্ত। তবে এখন আগের মতো আর সবাই যেকোনো পরিমাণ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে হলে অবশ্যই ই-টিআইএন (ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) থাকা বাধ্যতামূলক।
শেষ কথা: কোনটি সেরা?
যাঁরা দ্রুত নগদ অর্থের প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবেন, তাঁদের জন্য এফডিআর সুবিধাজনক হলেও তাতে মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় প্রকৃত আয় কমে যায়। অন্যদিকে, যাঁরা দীর্ঘমেয়াদি ও নিরাপদ বিনিয়োগ চান, তাঁদের জন্য সঞ্চয়পত্র এখনো সবচেয়ে ভালো বিকল্প।
তবে যেখানেই টাকা রাখা হোক না কেন, বিনিয়োগের আগে ঝুঁকি, তারল্য এবং প্রকৃত মুনাফার বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি।
নুসরাত