
ছবি: সংগৃহীত
লাখো জনতার ঢল। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক আয়োজিত বিএনপির তারুণ্য সমাবেশে। কেউ এসেছেন ক্ষোভ নিয়ে। আবার কেউ এসেছেন বার্তা দিতে। পুরো সমাবেশে দলটির হাইকমান্ড ও নেতাকর্মীদের বক্তব্য থেকে সরকারের উপর ক্ষোভ ও অনাস্থার বার্তা দেওয়া হয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম থেকে বর্তমান সরকারকে নির্বাচনী রোডম্যাপ দিতে সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে। না হয় আরেকটি বিজয়ের জন্য নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়।
অন্যদিকে রোদ বৃষ্টিতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা কষ্ট সহ্য করে যারা সমাবেশে এসেছেন তাদের কাছ থেকেও পাওয়া যায় অভিন্ন বার্তা।নিজেদের নিরাপত্তার জন্য, সুরক্ষার জন্য চব্বিশে ছাত্রজনতার উপর ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় অনেকে তীব্র শঙ্কার কথা জানান। দুই হাজার খুনের বিচার দ্রুত না হওয়ায় আগামীর রাজনীতিতে মহাবিদেরও ইঙ্গিত দেওয়ায় হয়। গত ১৮ বছরের নির্যাতিত রাজনৈতিক দল, চব্বিশের শহীদ পরিবার সকলের পরামর্শে ড. ইউনুস সরকারকে নির্বাচনের রুপরেখা তৈরি করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ছাত্রজনতার রক্তের বিজয় পরবর্তী দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে খুশি হওয়ার কথা সেভাবে খুশি হতে পারছে না। গতকাল নয়াল্টনে বিএনপির লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক সমাবেশ থেকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে।
সমাবেশস্থল থেকে ২০০ গজ দূরে দুই সন্তানকে নিয়ে মুহাম্মদপুর থেকে এসেছেন বিলকিছ জামান। তিনি বলেন, আমরা গত ১৮ বছর ভোট দিতে পারিনি।আমরা বিএনপি সমর্থক পরিবারের হওয়ায় আমাদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়নি আওয়ামী লীগ। হাসিনা চলে গেছে আজ ৯/১০ মাস হতে চলছে এখনো ভোট দিচ্ছে না।আমরা ভোট কবে দেবো। সেটাও জানি না। আমরা ভোট দিতে চাই। এতোদিন হয়ে গেছে দিনদুপুরে চোখের সামনে চব্বিশের জুলাইয়ে আমাদের সন্তানদের, ভাইদের আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা গুলি করে মেরে ফেলছে। এখনও তাদের বিচার হচ্ছে না। যে অস্ত্র দিয়ে খুন করা হয়েছে সেগুলো উদ্ধার হচ্ছে না। যারা প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তারা গ্রেফতার হচ্ছে না। এখনও আওয়ামী লীগের বিচার হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ কিভাবে এখনও মিছিল করে ইউনুস সরকার কী করে? যদি আওয়ামী লীগের বিচার না হয়, দ্রূত ভোট না হয় আমরা হাসিনাকে সরানোর মতো আন্দোলন করবো। বিচার না হওয়ায় , ভোট না হওয়ায় এই ইউনুস সরকারের উপর আমাদের অনাস্থা বাড়তেই থাকবে।
সমাবেশ থেকে ঠিক উল্টোপাশে নিজের রিক্সার উপর বসে বক্তব্য শুনছেন জাবির মিয়া। তার বাড়ি ভোলা। বিএনপি করায় দীর্ঘদিন বাড়ি যেতে পারেননি। ঢাকায় রিক্সা চালান। তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান ভোট চেয়েছে কিন্তু এই সরকার ভোট দিচ্ছেন না। শুধু ভোট নয় তিনি আওয়ামী খুনিদের বিচারও করছে না। এখনও কিভাবে আওয়ামী লীগ মিছিল করে। যারা প্রকাশ্যে দুই হাজার মেরে ফেলছে। হাজার মানুষকে পঙ্গু করেছে। যে সরকার রক্তের উপর বসে খুনের বিচার করেন না। নির্বাচন দেন না তার উপর কিভাবে আস্থা রাখি।
ঢাকা কলেজের ছাত্রদল নেতা সাব্বির হোসেন।দুপুর ১২টা থেকেই তাকে পল্টনে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তিনি বলেন, বাবা-মার মুখে শুনেছি ভোটের দিন কেমন হতো। সারাদিন নাকি উৎসবের মতো পরিবেশ থাকতো। পরিবার মিলে ভোটকেন্দ্রে যেত। কিন্তু নিজের চোখে দেখা হয়নি। আমি চাই সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে আসুক এবং নিজের ভোটের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে উঠুক।আমার ভোটেই হোক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ। আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে চাই। একই সঙ্গে আমি চব্বিশের আন্দোলনের সাইন্সল্যাব এলাকায় রাজপথে ছিলাম। গত ১০ মাসেও জুলাই হত্যাকান্ডের বিচার, আওয়ামী লীগের বিচার শুরু না হওয়ায় এই সরকারের উপর আমার আস্থা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
নাদিয়া শারমিন নিলা। ইডেন মহিলা ককেজ ছাত্রদলের নেত্রী।তিনি বলেন আমরা ভোটের অধিকার চাই। দ্রুত ভোট দিতে চাই। ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ চাই। জুলাইয়ের খুনি ও অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার চাই।
অন্তর্বর্তী সরকার ১০ মাস পরেও নির্বাচন দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। তিনি তরুণদের প্রস্তুতি নেওয়ারও আহ্বান জানান।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছি, সরকারের পদত্যাগ নয়। কিন্তু সরকার পদত্যাগ নিয়ে নাটক করছে।ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের আহ্বান জানান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, সরকারের মাথা থেকে নিচ পর্যন্ত পচে গেছে। সরকার আরও বেশি দিন থাকলে আওয়ামী লীগ যা করেছে, তার চেয়ে খারাপ হয়ে যাবে। এই সরকার আস্থার প্রতীক ছিল। তাদের কাছ থেকে আস্থার কিছু পাইনি। শুধুই অবজ্ঞা পেয়েছি। সরকার ঔপনিবেশিক সরকার। তারা ৯ মাসে যা পারেনি, ৯ বছরেও পারবে না এবং ৯০ বছরেও তা পারবে না। অতএব জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে কী করবেন করেন।
শিহাব