ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কৃষকবান্ধব শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান

শরিফুল রোমান

প্রকাশিত: ১২:৩০, ৩০ মে ২০২৫

কৃষকবান্ধব শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান

ছবি: সংগৃহীত

কৃষকবান্ধব শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছিলেন। জিয়ার গৃহীত বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচিসমূহ উপস্থাপন করা হলো

জিয়াউর রহমান প্রাকৃতিক জলাধার সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা দেশে খাল খনন কর্মসূচি শুরু করেন। সমাজকে সংগঠিত করার এক অনন্য নজির হচ্ছে খাল খনন কর্মসূচি।  এই কর্মসূচির বহুমুখী উদ্দেশ্য ছিল—কৃষিতে সেচ নিশ্চিত করা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। সারা দেশে খাল খনন করে প্রাকৃতিক জলাধার নির্মাণের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির পরিবর্তে উপরিভাগের পানির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া খালগুলোতে মাছের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। আর এ খাল খননের সরাসরি প্রভাব পড়েছিল কৃষিতে।

জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী ধারণার বিভিন্ন পরিকল্পনার মধ্যে এক ধরনের গণভিত্তিক কর্মসূচি লক্ষ করা যায়। তাই কৃষিজমির আল বা বিভাজনও তুলে দেওয়ার কথা জিয়া বলেন। অনেকেই মনে করেন, দেশে কৃষি খাতে যৌথ খামার পদ্ধতি শুরু করার পরিকল্পনা ছিল জিয়ার। জিয়াই সরাসরি কৃষি সমবায়ের কথা উল্লেখ করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে উদার অর্থনীতির সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক কৃষিব্যবস্থার সমন্বয়ের চিন্তাও হয়তো তার ছিল। তিনি আর কিছুদিন বেঁচে থাকলে হয়তো এ কাজ অসম্পূর্ণ থাকত না।

জিয়াউর রহমানের আমলে কৃষি খাতে বেসরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়। সেচের জন্য গ্রামে গ্রামে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল গড়ে ওঠে। একজন সেচযন্ত্র কিনে অন্যদের চাষের জমিতে পানি সরবরাহ করত। 

সব ফসলের মূল ও প্রধান উপকরণ হলো বীজ। ভালো বীজ মানে ভালো ফসল রাষ্ট্রপতি জিয়া একজন বিজ্ঞানীর মতোই এ কথা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া কৃষির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য কৃষকের হাতে উন্নতি প্রযুক্তি দ্রুত পৌঁছানো এবং প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে কৃষিতে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেন।

তিনি কৃষি উপকরণ বিতরণ ব্যবস্থা সংস্কার, কৃষি উপকরণ ব্যবসা উদারীকরণ নীতি প্রণয়ন করেন। বীজের পর ফসল উৎপাদনের প্রধান উপকরণ হলো রাসায়নিক সার, সেচ ও সেচ যন্ত্র (শ্যালো টিউবওয়েল, ডিপ টিউবওয়েল), আধুনিক চাষ যন্ত্র (পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, রিপার, হার্ভেস্টার) ইত্যাদি। কৃষক যেন শস্য সংগ্রহের সময় তার ফসল বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য তিনি ১৯৭৮ সালে শস্য গুদাম ঋণ কর্মসূচি গ্রহণ করেন।

দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য খাদ্যের আপদকালীন মজুত গড়ে তোলার ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। কৃষকদের শস্য উৎপাদনে উৎসাহিত করতে তিনি ভালো দামে তাদের কাছ থেকে সরাসরি ধান-চাল ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। 

তার শাসনামলেই ধানের বাম্পার ফলনের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রথম চাল রপ্তানি করা হয়। দেশের মানুষ তথা দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে জিয়া বিশেষ কর্মপন্থা গ্রহণ করেন। 

শস্য সংগ্রহের সময় শস্যের দাম সাধারণত কম থাকে আবার একই শস্য কিছুদিন পর বেশি দামে কৃষককে কিনে খেতে হয়। কৃষক যেন শস্য সংগ্রহের সময় তার ফসল বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য তিনি ১৯৭৮ সালে শস্য গুদাম ঋণ কর্মসূচি গ্রহণ করেন। আর এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হন।

কোনো ধরনের জামানত ছাড়াই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক যেন সহজেই কৃষিকাজের জন্য ঋণ সুবিধা পান, সেজন্য তিনি ১৯৭৭ সালে ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ কৃষি ঋণ কর্মসূচি প্রণয়ন করেন, যা বাংলাদেশের কৃষি ঋণ প্রবাহে নতুনমাত্রা যোগ করে এবং দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। 

গ্রামীণ অবকাঠামোকে উন্নত করার লক্ষ্যে  জিয়াউর রহমান পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন, যার দায়িত্ব ছিল গ্রাম অঞ্চলকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা। আর এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যুৎ ব্যবহার করে সেচ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্প্রসারণের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়ন বৃদ্ধি করা, যেন পল্লি এলাকার জনগণের জীবনমানের উন্নতি হয়। দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুবসমাজ যেন উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়, সেজন্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে যুব মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ১৯৮১ সালে যুব উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন। যার মাধ্যমে দেশে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা তৈরি ও বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান গমের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশেই গমের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গম গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেন। জিয়ার শাসনামলে ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে নশিপুর, দিনাজপুরে গম গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

জিয়াউর রহমানের গৃহীত কর্মসূচি ও নীতিমালার সুফল মাত্র দুই বছরের মধ্যেই দেশের মানুষ পেতে শুরু করেছিল; যা দেশের সবুজ বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করেছিল। 

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, মাঠেঘাটে, হেঁটে ছুটে বেড়িয়েছেন, কখনো লাঙল হাতে, কখনো কাস্তে হাতে; আবার কখনো কোদাল হাতে। জিয়া কৃষকের মাঠে গিয়ে কৃষকের সঙ্গে কথা বলেছেন, সমস্যা জেনেছেন, কৃষকের সঙ্গে কাজে অংশ নিয়েছেন, কৃষকদের অনুপ্রাণিত ও জাগ্রত করেছেন। 

শিহাব

×