
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সাবান ফ্যাক্টরি এলাকায় অল্প বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় পুরো রাস্তা, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকার কারণে বৃষ্টির পানি, শৌচাগারের পানিসহ ময়লা পানি সড়কে এসে জমা হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে সড়কে চলাচল করা পথচারী ও এলাকাবাসী। ভূমি অফিস সেবা নিতে আসা সেবা গ্রহীতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে। এছাড়া প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। সংস্কারের অভাবে সুয়ারেজ লাইনের ময়লা পানিতে হাঁটু সমান ডুবে থাকে সড়কটি। বৃষ্টিতে সড়কটি আশীর্বাদের বদলে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায় এখানকার মানুষের কাছে।
আজ শনিবার ( ৩১ মে ) দুপুরে সাবান ফ্যাক্টরি এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রাক, রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, সিএনজিসহ অন্যান্য যানবাহনে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত করে। স্থানীয়রা ময়লা পানিতে সাবধানে চলাচল করলেও অধিকাংশ মানুষ জানেনা বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি গুলো শৌচাগার বা বাথরুমের পানি। তাই নিজের অজান্তেই নোংরা পানিতে নষ্ট হচ্ছে জামাকাপড়সহ প্রিয় যানবাহন। আর ব্যবসায়ীরা আছেন চরম ভোগান্তিতে ।
রিকশা চালক রহিম বলেন, ‘এই রাস্তায় বৃষ্টি হলেই পানি জমে থাকে। এ রাস্তা দিয়ে রিকশা চালানো বিপদ। কখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়। কারণ পানির নিচে তো বুঝা যায় না কোন দিক ভালো আর কোন দিকে ভাঙা। অনেক ঝুঁকি নিয়েই এই সড়কে রিকশা চালাতে হয়। তবে রাস্তাটি অতি দ্রুত সংস্কার না করলে যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো: সাহিদ জানান, ‘এই রাস্তার পাশেই আমাদের দোকান । নোংরা পানির কারণে আমাদের কাস্টমার কমে গেছে, এতে আমরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাছাড়া রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থী,পথচারী, যাতায়াত করে, জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা সহ রাস্তাটি সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
একই এলাকার হোটেল ম্যানেজার কাইয়ুম জানান, ‘বৃষ্টি হলেই ড্রেনের নোংরা পানিতে রাস্তা ডুবে যায়। পানি জমে থাকার কারণে হোটেলে কাস্টমার আসতে পারে না। হাঁটু পানি মাড়িয়ে অনেকেই প্রবেশ না করে ফিরে যান এতে আমরা ব্যবসায়িরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এই দুর্ভগ থেকে আমরা মুক্তি চাই। তাই রাস্তা সংস্কারের পাশাপাশি ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালু করাটা ও খুব জরুরি।’
অটো রিকশা চালক আবুল বলেন, ‘এখন জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন চলাচলে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। ঠিকমতো ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করায় সামান্য বৃষ্টির পানিতে সাবান ফ্যাক্টরি এলাকার রাস্তা তলিয়ে যাচ্ছে। প্রায় সময় মোটরে পানি প্রবেশ করে রিকশা বিকল হয়ে পড়ে। ফলে যাত্রী চলাচলে নানা বাঁধা বিড়ম্বনা লেগেই থাকে। রাস্তাটিতে পানি জমে থাকার বিষয়টি দীর্ঘদিনের সমস্যা।’
আরেক অটো রিকশা চালক মোশারফ বলেন, ‘অটো চালিয়েই চলে আমার সংসার। রাস্তা নিয়ে আমার একটাই অভিযোগ, উপজেলার কত রাস্তা ঠিক হচ্ছে, কিন্তু আমাদের রাস্তা সংস্কার হচ্ছে না। ভাঙা রাস্তার কারণে অটো বেশিরভাগ সময়ই টেনে নিতে হয়। এ দুর্ভোগ কবে শেষ হবে।’
স্থানীয় যুবক মেহারাজ জানায়, ‘আমাদের এলাকার বাসিন্দাদের যাতায়াতার একমাত্র রাস্তা হলো এটি। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রায় ৪ বছর পূর্বে এ রাস্তাটিতে ইট বিছানো হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাস্তাটি আর পাকা হয়নি।দুঃখের বিষয় গত তিন বছর ধরে রাস্তার বিভিন্ন অংশের ইট সরে গিয়ে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরে। এমনকি গ্রামের মধ্যে রিক্সাওয়ালারাও আসতে চায় না। রাস্তাটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারের দাবিতে জানাচ্ছি।’
আরেক যুবক জারিফ বলেন, ‘আমাদের এলাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এটি রাস্তাটি ভাঙ্গা থাকায় আমাদের চলাচল করতে খুবই অসুবিধা হয়। আমাদের রাস্তায় ছোট-ছোট গর্ত থাকায় বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতে খুব অসুবিধা হয়। রোগী বহন কারী গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা টি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো: আরিফুর রহমান মোটু ফোনে জানান, ‘ময়লা আবর্জনা দিয়ে ড্রেনের মুখ বন্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ড্রেন পরিষ্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি ইতোমধ্যে এ রাস্তাটির দরপত্র পাশ হয়েছে। খুব দ্রুত রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।’
মিরাজ খান