
ছবি: জনকণ্ঠ
ঠিকাদারদের খামখেয়ালীতে শেষ হয়নি লক্ষ্মীপুরের দুই উপজেলার মেঘনা নদী তীররক্ষা বাঁধের কাজ। এতে জোয়ারের পানি ঢুকছে লোকালয়ে। নষ্ট হচ্ছে স্থানীয়দের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত একর জমি।
২০২২ সালে জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে। অথচ কাজ হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ। কয়েকটি স্থানে শুরুই হয়নি নির্মাণ কাজ। তবে প্রকল্পের বেশিরভাগ অংশে জিওব্যাগের ডাম্পিং করা হয়েছে।
জানা গেছে, নদী ভাঙন থেকে জেলার রামগতি-কমলনগর উপজেলা রক্ষায় সরকার প্রায় ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটি মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে কাজের উদ্বোধন করা হয়।
বর্তমানে ৩১ কিলোমিটার এলাকায় চলমান বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে অন্তত ৫টি বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ চলছে না। বিভিন্ন প্যাকেজে তাদের অধীনে রয়েছে ৩৫টি লটের (প্রতি লট ২৫০-৩৫০ মিটার) কয়েক কিলোমিটার কাজ। প্রকল্পের অন্য ১১ কোম্পানির ৬২টি লটের কাজও চলছে ধীরগতিতে।
আরও জানা গেছে, প্রকল্পের কার্যাদেশ প্রাপ্ত ৯৭ টি লটের মধ্যে ৩৫ টি লটে কোন কাজ হচ্ছে না। এদের মধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এসএসইসিএল-এর ৭টি লটে ২ থেকে ৩ ভাগ, এডব্লিউআর এর ৫টি লটে ২ ভাগ, বিশ্বাস বিল্ডার্সের ৬টি লটে ২ ভাগ, ইলেক্ট্রো গ্রুপের ১টি লটে ৫ ভাগ শেষ হওয়ার পর থেকে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ওয়ের্স্টান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৫টি লটে প্রায় ৪০ ভাগ শেষ হওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ।
স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল বলেন, দীর্ঘদিন থেকে প্রকল্পের কয়েকটি জায়গায় কোন কাজ চলছে না। একাধিক ঠিকাদারের কোনো খোঁজ নেই। কয়েকজনতো শুরু থেকেই কাজ করেননি। তারা এখন লাপাত্তা। এজন্য ভোগান্তিতে দিন পার করছে নদী তীরবর্তী মানুষ। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ডুবে যায়। নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত একর জমি।
আরও বলেন, রামগতির নুরিয়া হাজীরহাট সংলগ্ন এলাকায় ২০২২ সালে জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত ওই এলাকায় কোন কাজ হয়নি। এখন মানুষ ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। পাটোয়ারিহাট এলাকায়ও একই চিত্র। জিওব্যাগ ফেলার পর আর কোন কাজ হয়নি।
আজাদ হোসেন বলেন, বাঁধ নির্মাণ কাজের গতি খুবই ধীর। কাজও হচ্ছে নিম্নমানের। ভালো মানের পাথর ব্যবহার করার কথা থাকলেও এখানে মরা ও রিজেক্ট পাথর এবং নিম্নমানের বালি ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কার্যকর কোন তদারকি নেই। এভাবে বাঁধ নির্মাণ হলে, টেকসই হবে না।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে লক্ষ্মীপুরের মেঘনায়। এতে প্লাবিত হয়েছে উপকূলীয় নিন্মঞ্চল এলাকাগুলো। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ।
কমলনগরের নবীগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা মো. শফিক বলেন, গত দু'দিনে নদীর পানি বেড়েছে। জোয়ারের সাথে ঘরে পানি উঠেছে। চুলায় রান্না হয়নি দু’দিন। বাঁধ থাকলে এমন ঘটনা হয়তো ঘটতো না।
ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রজেক্ট ম্যানেজার মাসুদ রানা বলেন, ঈদের (ঈদুল ফিতর) পর থেকে কয়েকটি কাজ চালু করার চেষ্টা করছি। কিন্তু কাজ শুরু করা যায়নি। তাছাড়া প্রথম দিকে অর্থ বরাদ্দ ছিল কম। সেজন্য দ্রুতগতিতে কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ জামান খান বলেন, জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি ছিল। নদী উত্তাল ছিল। ভাটায় স্বাভাবিক হয়ে যায়। এছাড়া তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। তবে কয়েক স্থানে ঠিকাদার ধীর গতিতে কাজ করছে। তদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সাব্বির