নিরিবিলি নদীঘেরা শহর খুলনার বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা একটি গর্বের নাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। আলোচনার বাইরে থেকে নীরব সাধনায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা এই বিশ্ববিদ্যালয় এবার জায়গা করে নিয়েছে দেশের শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তালিকায়। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলেছে বহুল সম্মানজনক নেচার ইনডেক্সের মাধ্যমে, যেখানে ২০২৪ সালের গবেষণাকেন্দ্রিক মূল্যায়নে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় উঠে এসেছে দেশের সেরা ১০ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অষ্টম স্থানে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছরের গবেষণা কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত এই তালিকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল অবস্থান ৪৬৬০তম এবং একাডেমিক ক্যাটাগরিতে ২৫৭৮তম যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিঃসন্দেহে এক অনন্য অর্জন।
অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা, গবেষণা তহবিলের ঘাটতি এবং অঞ্চলগত প্রান্তিকতার মধ্যেও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকরা যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, এই স্বীকৃতি তারই প্রমাণ।
গবেষণার মান ও উদ্ভাবনী দক্ষতা বিবেচনায় সাইমাগো ইনস্টিটিউশন র্যাংকিং (SIR) -এও এবার দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। গবেষণাকর্মের গুণগত মান আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও গুরুত্ব পাচ্ছে, যার প্রমাণ মিলছে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক জার্নালগুলোতে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে।
বিশ্বখ্যাত ‘অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স লেটারস’ জার্নালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যার সম্মিলিত ফ্র্যাকশনাল কন্ট্রিবিউশন ০.৩৫। এছাড়া ‘কেমিক্যাল সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণাপত্রের অংশীদারিত্ব ০.০৭। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট গবেষণা শেয়ার দাঁড়িয়েছে ০.৪২, যা আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ের বিচারে অত্যন্ত সম্মানজনক।
বিষয়ভিত্তিক র্যাংকিংয়েও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল অবস্থান:
-
রসায়নে: দেশে অষ্টম, বিশ্বে ২৭৫৭তম
-
ভৌত বিজ্ঞানে: দেশে তৃতীয়, বিশ্বে ২৩৯৬তম
প্রতিটি সংখ্যার পেছনে রয়েছে অগণিত গবেষকের নিঃশব্দ লড়াই, রাতজাগা পরিশ্রম আর সৃষ্টিশীল অনুসন্ধান।
এই সাফল্যে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, "এই অর্জন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় মানোন্নয়নের ধারাবাহিকতার প্রতিফলন। এটি আমাদের গবেষকদের আরও উৎসাহিত করবে এবং আমরা একটি টেকসই গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছি।"
দীর্ঘ পরিকল্পনা, গবেষণাকেন্দ্রিক উদ্যোগ, ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির ফলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আজ বিশ্বমঞ্চে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে।
মিমিয়া
