ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পলিথিন দূষণ: নিষিদ্ধ থেকেও সর্বত্র বিস্তার

মো: মুরসালিন চৌধুরী, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ২৮ মে ২০২৫

পলিথিন দূষণ: নিষিদ্ধ থেকেও সর্বত্র বিস্তার

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রতিদিনের জীবনে পলিথিন ব্যবহার যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বাজার সদাই, খাবার পরিবেশন কিংবা সামগ্রী মোড়ানোর কাজে আমরা যেভাবে পলিথিন ব্যবহার করছি, তা যেন আমাদের ভবিষ্যৎকেই অন্ধকার করে তুলছে। পরিবেশবিদরা সতর্ক করছেন—পলিথিন এখন শুধু মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে না, বরং ধ্বংস করছে জীববৈচিত্র্য, বন্ধ করছে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ, এবং সৃষ্টি করছে এক দীর্ঘস্থায়ী দূষণের শৃঙ্খল।

২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। আজও বাজারে দেখা যায় অবাধে বিক্রি হওয়া রঙ-বেরঙের পাতলা পলিথিন। প্রশাসনের নজরদারির অভাব এবং বিকল্প সামগ্রীর সহজলভ্যতার ঘাটতি এই সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

পলিথিনের কারণে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। ড্রেনে জমে থাকা পলিথিন বৃষ্টির পানিকে আটকে দেয়, ফলে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। রাজধানী ঢাকার মতো শহরে প্রতি বর্ষায় পানিতে ডুবে যায় সড়ক। পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রতি বছর শত শত টন পলিথিন মাটির নিচে এবং পানিতে জমা হচ্ছে—যা শত বছরেও পুরোপুরি মিশে না।

মাঠে, নদীতে কিংবা বনভূমিতে পলিথিন গিলে ফেলছে গবাদি পশু ও বন্যপ্রাণী। এগুলো হজম না হওয়ায় তাদের মৃত্যু হচ্ছে ধীরে ধীরে। এছাড়াও, পলিথিন পুড়িয়ে ফেলার সময় যে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়, তা বাতাসকে করে তুলছে দূষিত—যার প্রভাব পড়ছে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে জুট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। স্কুল-কলেজে পরিবেশ শিক্ষার মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা যেতে পারে। পাশাপাশি, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপও জরুরি।

পলিথিন আমাদের স্বাচ্ছন্দ্যের সাময়িক উপায় হলেও, এটি দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এখনই যদি আমরা সচেতন না হই, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাব এক বিষাক্ত পৃথিবী।

সানজানা

×