
ছবি: সংগৃহীত
ব্যবসা, মাছ চাষসহ কত কিছুই না করেছেন, কিন্তু সফল হননি। অবশেষে বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থার পরামর্শে শুরু করেন চারা উৎপাদনের কাজ। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি আশেকে রাসুল লেবু মিয়াকে।
নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নে হাইস্কুলপাড়ায় ২০০১ সালে আশেকে রাসুল লেবু মিয়া বাড়ির পাশে মাত্র এক বিঘা জমিতে শুরু করেন ছোট্ট একটি নার্সারি। নিজ সন্তানের নামে নার্সারির নাম দেন ‘এ আর মামুন নার্সারি’। দুধরাজ, হাড়জোরা, স্বর্ণ চাঁপাসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় গাছের চারা আছে সেখানে।
এছাড়াও বর্তমানে এই নার্সারিতে হয়েছে দেশি-বিদেশি নানা জাতসহ এগারো শত প্রজাতির গাছ। সব মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ চারা মজুদ আছে লেবু মিয়ার নার্সারিতে।
দীর্ঘ ২৩ বছরে লেবু মিয়ার ১ বিঘার নার্সারির পরিধি বেড়ে এখন ৫০ বিঘা। নার্সারিতে হয়েছে ৩০ জন মানুষের কর্মসংস্থান। বৃক্ষরোপণে অসামান্য অবদান রাখায় পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার ও নিজ জেলায় নয়বার শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার।
নার্সারি করে সাফল্যের বিষয়ে আশেকে রাসুল লেবু মিয়া বলেন, মাছ ব্যবসায় জড়িত থাকা অবস্থায় কৃষি বিভাগের এক ভ্রাম্যমাণ দলের কাছে জানতে পারি, গাছের চারা বিক্রি করেও লাভবান হওয়া যায়। সে সময় সিদ্ধান্ত নিয়ে এক বিঘা জমিতে নিমের চারা লাগাই। এরপর পিছনে তাকাতে হয়নি। পরিবার ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতা আজ ৫০ বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে নার্সারিটি। দেশি-বিদেশি আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, পোয়ারা, মাল্টা, কমলা, নারকেল, সুপারিসহ এগারো শত প্রজাপতির ফলের চারা রয়েছে এখানে।
তার ছেলে এ আর মামুন বলেন, ‘নার্সারি আমাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। আজ আমাদের চারা দেশের সব জায়গায় সরবরাহ হচ্ছে। তাছাড়া বিদেশ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির চারা সংগ্রহ করে সেখান থেকে সায়ন পদ্ধতিতে চারা বৃদ্ধি করছি। সব খরচ বাদ দিয়ে এই নার্সারি থেকে বছরে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা লাভ হয়।’
নার্সারির অনলাইন সেক্টরে কাজ করা জয় সরকার বলেন, ‘আমি পড়াশুনার পাশাপাশি এই নার্সারিতে কাজ করি। এখান থেকে যা বেতন পাই, তা দিয়ে পড়ালেখা ও সংসারে সাহায্য করি। নার্সারিতে শুধু আমি না, অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।’
ঢাকার উত্তরা থেকে চারা কিনতে আসা মোঃ আলামিন বলেন, ‘এ আর মামুন নার্সারি, বিভিন্ন ভিডিও স্যোশাল মিডিয়ায় দেখেছি। নার্সারি দেখে খুব ভালো লাগছে। এদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি নার্সারি করবো। তাই ঢাকা থেকে এসেছি চারা গাছ কিনতে।’
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এ আর মামুন নার্সারি জেলায় মডেল নার্সারি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে দেশি-বিদেশি প্রচুর চারা গাছের সমারোহ আছে। আমরা তাদের সার্বিকভাবে সাহায্য ও পরামর্শ দিচ্ছি।’
মাহমুদ হাচান/রাকিব