ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পর্যটনস্পট শ্রীমঙ্গল

ঈদ অবকাশে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

আবুল ফজল মো. আবদুল হাই

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ৩১ মে ২০২৫

ঈদ অবকাশে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

দুটি পাতা একটি কুড়ির দেশ, পর্যটননগরী ও চায়ের রাজধানী খ্যাত সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গল উপজেলা দেশ বিদেশের সবার কাছেই সুপরিচিত। শ্রীমঙ্গল শহরকে  পর্যটনের দেশ বলা  হয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য সম্পন্ন দেশগুলো নিজেদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এই সৃজনশীল অর্থনীতিকে মূল অর্থনীতির সঙ্গে বহুমাত্রিকভাবে সংযোজন করে, যা জাতীয় অর্থনীতিকে বেগবান ও বৈশ্বিক করে তোলে।
বারো মাসে তেরো পার্বণের দেশ বাংলাদেশ। দেশে বিভিন্ন উৎসব, পর্যটন সব কিছু ঋতুচক্রে আবর্তিত হয়। এই আবর্তনে অর্থনৈতিক প্রবাহের রূপান্তর ও প্রবৃদ্ধি ঘটে। অর্থনীতির স্বাভাবিক সংজ্ঞার বাইরে পর্যটনকে এক সৃজনশীল অর্থনীতি বলা যায়। 
ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের পর্যটন খাতে সরাসরি কর্মরত ১৫ লাখ মানুষ। আর পরোক্ষভাবে আরও ২৩ লাখ লোক এ খাতের সঙ্গে যুক্ত। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। এ খাত আরও বহুগুণে বৃদ্ধি করা সম্ভব। আর্থিক মূল্যে দেশীয় পর্যটন খাতের আকার দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৪ হাজার কোটি টাকার। এ খাত আরও প্রসারিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে আরও এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বিশ্ব পর্যটন অর্থনীতিকে মাথায় রেখে নতুন নতুন পরিকল্পনা ঢেলে সাজাতে হবে।
প্রতি বছর ঈদেই বিপুল সংখ্যক ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের সমাগম হয় মৌলভীবাজারে। এবারও ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত শ্রীমঙ্গলের পর্যটন স্পট ও আবাসন ব্যবসায়ীরা। পুরো জেলায় শতাধিক পর্যটনস্পট থাকলেও দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের প্রথম পছন্দ হলো চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা। ফলে এই দুই উপজেলাসহ জেলার পর্যটন স্পটগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্টসহ দেড় শতাধিক রিসোর্ট, ইকো কটেজ, হোটেল, মোটেল। যার মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ আগাম বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কয়েক দিনে শতভাগ বুকিং সম্পন্ন হবে বলে প্রত্যাশা আবাসন ব্যবসায়ীদের। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত পাঁচ তারকা মানের হোটেলসহ বিভিন্ন মানের শতাধিক হোটেল-রিসোর্ট ও কটেজে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। পর্যটকবান্ধব মৌলভীবাজারের আইনশৃঙ্খলা বর্তমানে দেশের যেকোনো স্থানের তুলনায় বেশ ভালো রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলায় রয়েছে প্র্রায় শতাধিক ছোট-বড় পর্যটন স্পটের পাশাপাশি ২১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস।
মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্ভুক্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। যার আয়তন ৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গকিলোমিটার এবং মোট আয়তনের ১৮৪ দশমিক ২৯ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে রয়েছে নয়নাভিরাম চা বাগান। রয়েছে প্রায় শতাধিক ছোট-বড় পর্যটন স্পটের পাশাপাশি ২১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস। 
চায়ের দেশে ভ্রমণের কথা ভাবলেই ভ্রমণপ্রেমীদের মনে ভেসে ওঠে চোখ জুড়ানো চা বাগান আর সারি সারি রাবার, লেবু-আনারস বাগানের দৃশ্য। এখানকার উঁচু-নিচু পাহাড়ের বুক জুড়ে সবুজ চা বাগানসহ নজরকাড়া প্রাকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ছুটে আসেন পর্যটকরা। জেলায় উঁচু নিচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের গালিচায় মোড়ানো ৯২টি চা বাগান। 
প্রতি বছর কি পরিমাণ পর্যটক শ্রীমঙ্গলে আসা যাওয়া করেন তার কোনো সঠিক তথ্য কারও কাছে নেই। শ্রীমঙ্গলের রিসোর্ট, ইকো কটেজ, হোটেল ও আবাসন মালিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এ সংক্রান্ত তথ্য কোনো ওয়েবসাইট বা কোনো ডাটাবেজ নেই। এ ব্যাপারে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে বলে তারা জানান। 
তারা আরও বলেন যে এ সম্ভাবনাময় খাত নষ্ট হতে চলেছে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, ট্রেনের টিকেটের স্বল্পতা, পর্যটক এক্সপ্রেসের মতো সিলেট রুটে নন-স্টপ ট্রেন না থাকা, যাও আছে সেগুলো লোকাল ট্রেন হওয়ার পথে।  
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ২০২৩-২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান প্রায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। সঠিক তথ্য-উপাত্ত না পাওয়া গেলেও ধারণা করা হয়, বছরে প্রায় ৪ কোটি দেশীয় পর্যটক সারা বাংলাদেশ ঘুরে বেড়ান। সে হিসেবে বাংলাদেশেও ভবিষ্যতে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। 
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে রেকর্ড সংখ্যক রাজস্ব আদায় 
দেশ বিদেশে চায়ের রাজধানী বলে খ্যাত ও পর্যটননগরী সিলেট বিভাগের শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মধ্যস্থলে অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গত ঈদুল ফিতরের দীর্ঘ ছুটিতে নজরকাড়া দর্শনার্থী সমাগম ঘটেছে। ছয় দিনের মধ্যে এখানে ৮ হাজার ৪০৫ জন দর্শনার্থী ও পর্যটক আসেন, যা থেকে মোট ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। 
এ বিষয়ে লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন, ‘ঈদে অন্যান্য সময়ের  তুলনায় দর্শনার্থী সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। এই বছরে আগের তুলনায় রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল জোনের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন, ‘মৌলভীবাজার জেলায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, বাইক্কা বিল, হাইল হাওড়, মাধবকুন্ড জলপ্রপাতসহ বেশ কয়েকটি মনোরম পর্যটন স্পট রয়েছে। ঈদের বন্ধে পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তায় সার্বিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। 
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইসলাম উদ্দিন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের বলেছেন, পর্যটন নগরীতে পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি  রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালনে তৎপর থাকবে। 

প্যানেল

×