
ছবি: সংগৃহীত
দু’চোখে বিদ্রোহের আগুন, ঠোঁটে সিগারেট। জঁ-লুক গদারের কালজয়ী চলচ্চিত্র Breathless-এ অভিনেতা জঁ-পল বেলমঁদোর ধূমপানের দৃশ্য যেন ফরাসি তরুণদের বিপ্লবের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।
ব্রিজিত বার্দোর লাল ঠোঁট আর ধোঁয়ার কুয়াশায় মোড়া সৌন্দর্য ‘সিগারেট’কে করেছিল ফ্যাশনের অংশ, প্রেমের ভাষা।
তবে সেই ফ্রান্স এবার সিগারেটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চলেছে। আগামী ১ জুলাই থেকে দেশজুড়ে কার্যকর হতে যাচ্ছে সবচেয়ে কঠোর ধূমপানবিরোধী আইন, যা পাবলিক প্লেসে ধূমপান কার্যত নিষিদ্ধ করবে।
ফরাসি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যাথরিন ভাত্রাঁ বলেন, ‘যেখানে শিশুদের উপস্থিতি রয়েছে, সেখানে তামাকের কোনো স্থান নেই। ধূমপানের স্বাধীনতা সেখানে শেষ হয়, যেখানে শিশুদের বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেওয়ার অধিকার শুরু হয়।’
নতুন নিষেধাজ্ঞা কোথায় কোথায়?
- সমুদ্র সৈকত
- পার্ক, উদ্যান ও খেলার মাঠ
- স্কুল গেট
- বাস স্টপ ও ক্রীড়া ভেন্যু
- শিশুদের উপস্থিতি আছে এমন যেকোনো পাবলিক জায়গা
অর্থদণ্ড: সর্বোচ্চ ১৩৫ ইউরো (প্রায় ১৫,০০০ টাকা)
চলচ্চিত্র আর সিগারেট—একটি সাংস্কৃতিক প্রেমের গল্প
ফরাসি সিনেমায় ধূমপান শুধু অভ্যাস নয়, বরং পরিচয়। ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৯০% ফরাসি চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য ছিল—যা হলিউডের তুলনায় দ্বিগুণ! প্রতিটি সিনেমায় গড়ে ৩ মিনিট ধূমপানের দৃশ্য, যা ছয়টি বিজ্ঞাপনের সমান প্রভাব ফেলে।
চলচ্চিত্রের প্রভাবে ধূমপান হয়ে উঠেছিল ‘কুল’ ও ‘ক্লাসি’-র প্রতীক। জাঁ-পল বেলমঁদোর ঠোঁটের কোণে সিগারেট মানেই ছিল বিদ্রোহ, আর ব্রিজিত বার্দোর ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে তাকানো মানেই কামনার রূপক।
তবু এই রোমান্সের মূল্য দিতে হচ্ছে চড়া দামে
ফ্রান্সে প্রতি বছর ৭৫ হাজার মানুষ মারা যান তামাকজনিত রোগে। যদিও সাম্প্রতিককালে ধূমপায়ীর হার কমে ২৫%-এর নিচে এসেছে, তবু শহুরে তরুণ সমাজের মধ্যে ধূমপান এখনও এক ধরনের 'স্টাইল স্টেটমেন্ট'।
উড়োজাহাজেও এক সময় ছিল ধূমপান বৈধ!
২০০০ সাল পর্যন্ত এয়ার ফ্রান্সে পুরোপুরি ধূমপান নিষিদ্ধ ছিল না—যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক দেরিতে। এটা বোঝায়, ফ্রান্স তার তামাকপ্রেমী সংস্কৃতিকে ছাড়তে চায়নি সহজে।
ইউরোপে বাড়ছে ধূমপানবিরোধী পদক্ষেপ
- সুইডেন: ২০১৯ সালেই রেস্টুরেন্টের টেরেস, বাস স্টপে ধূমপান নিষিদ্ধ
- স্পেন: ক্যাফের বাইরের অংশেও নিষেধাজ্ঞা
- যুক্তরাজ্য: স্কুল, খেলার মাঠসহ নানা স্থানে ধূমপান বন্ধ
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
রাকিব