
ছবি: সংগৃহীত
সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত প্রতি ১০ জন জেন-জেড কর্মীর মধ্যে প্রায় ৭ জন (৬৮ শতাংশ) জানিয়েছেন, তারা তাদের বয়োজ্যেষ্ঠ সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগে সমস্যায় পড়েন। অথচ, পুরনো প্রজন্মের অনেকেই এটি কোনো সমস্যা বলে মনে করেন না। এমন তথ্য উঠে এসেছে কর্ন ফেরি পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায়।
যোগাযোগ বিভ্রাটের দুই মূল কারণ চিহ্নিত করেছেন কর্ন ফেরি ডিজিটালের ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক বিজয় গান্ধী। তিনি বলেন, জেন-জেড প্রজন্মের ডিজিটাল-প্রধান যোগাযোগ পদ্ধতি এবং কোভিড-১৯ মহামারির মানসিক প্রভাব—এই দুটি বিষয় এই ব্যবধান সৃষ্টি করেছে।
খালিজ টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গান্ধী বলেন, “জেন-জেড হচ্ছে প্রথম প্রজন্ম যারা পুরোপুরি ডিজিটাল যুগে বড় হয়েছে। তাদের যোগাযোগের অভ্যাস তৈরি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মেসেজিং অ্যাপ ও ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। ফলে, তাদের কথাবার্তার ধরন আগের প্রজন্মের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন।”
তিনি আরও বলেন, “বয়োজ্যেষ্ঠ সহকর্মীরা হয়তো মনে করেন যে জেন-জেড কম সামাজিক, কিন্তু এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা। জেন-জেড অনেকটাই সামাজিক, তবে তাদের প্রকাশভঙ্গি আলাদা। তারা এখনো পুরনো যোগাযোগ পদ্ধতি, যেমন সামনাসামনি আলোচনা বা টেলিফোনে কথা বলা—এসবের সঙ্গে তেমন পরিচিত নয়। অনেকের জন্য ফোন কল করা পর্যন্ত বিব্রতকর বা অস্বস্তিকর লাগে — যাকে তারা ‘ক্রিঞ্জ’ বলেই বর্ণনা করে।”
“এই পার্থক্য সেইসব কর্মপরিবেশে টানাপোড়েন সৃষ্টি করে যেখানে এখনও কফির টেবিলের আলাপ কিংবা ফোনে কথোপকথনই স্বাভাবিক ধারা।”
ভিসা পরিচালিত অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬২ শতাংশের বেশি জেন-জেড কর্মসংস্থানে নিযুক্ত আছেন, যাদের বেশিরভাগই পূর্ণকালীন চাকরিতে। এক-তৃতীয়াংশ এখনো ছাত্র, তবে তাদের অনেকেরই ইতোমধ্যে ব্যক্তিগত আয়ের উৎস রয়েছে।
গান্ধী আরও বলেন, জেন-জেড প্রজন্মের বেড়ে ওঠা সময়কাল ছিল কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে, যখন স্কুল বন্ধ, অনলাইন শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ছিল নিত্যদিনের বিষয়। তাই তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেও এর বড় প্রভাব পড়েছে।
“গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, জেন-জেড ও তরুণ মিলেনিয়ালরা প্রতি সপ্তাহে প্রায় এক দিনের সমান কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন মানসিক চাপের কারণে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই প্রজন্ম নিজেদের মানসিক সমস্যার কথা খোলাখুলি বলছে।”
তিনি জানান, জেন-জেড মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে সোচ্চার। বিলি আইলিশ, এড শিরান, সেলেনা গোমেজ এবং শন মেন্ডেসের মতো তারকাদের কাছ থেকে তারা অনুপ্রেরণা নেয়, যারা নিজেরাও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন।
“এই উন্মুক্ততা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে আলাপচারিতা স্বাভাবিক করতে সাহায্য করেছে এবং সামাজিক ঝামেলা কমিয়েছে। তারা শুধু স্বীকৃতি চায় না — তারা বাস্তব সাপোর্ট চায়। এর মধ্যে রয়েছে থেরাপির সুযোগ, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়ক টুলস এবং প্রয়োজন হলে মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করতে ছুটি নেওয়ার সুযোগ, তাও যেন কোনোরকম সামাজিক বিচার ছাড়া,” বলেন গান্ধী।
শেষে গান্ধী বলেন, “পেশাগতভাবে তারা হয়তো এখনো নিজেদের অবস্থান গড়ছে, কিন্তু আবেগগত বুদ্ধিমত্তা এবং মনোযোগী মানসিকতা দেখিয়ে তারা ইতোমধ্যে এক আন্তঃপ্রজন্মীয় পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।”
সূত্র: https://www.khaleejtimes.com/jobs/gen-z-employees-communication-struggle-older-colleagues?fbclid=IwY2xjawKqU2tleHRuA2FlbQIxMQABHkIq0P-9aJThbjWdc2tXl52zhouveDIdP7s81xGpNZZAjprOm-9mym7NBl0y_aem_QVWh_S6phDzuwTcFNkrrTA
আবির