ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পৃথিবীর সবচেয়ে জনশূন্য ১২টি দেশ: যেখানে  অপরূপ সৌন্দর্যে পূর্ণ প্রাকৃতির মাঝেও ৯৯% এলাকাই খালি

প্রকাশিত: ১০:২৪, ৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১০:২৫, ৩ জুন ২০২৫

পৃথিবীর সবচেয়ে জনশূন্য ১২টি দেশ: যেখানে  অপরূপ সৌন্দর্যে পূর্ণ প্রাকৃতির মাঝেও ৯৯% এলাকাই খালি

পৃথিবীর কিছু দেশ এমন অসাধারণ সৌন্দর্যের অধিকারী, যেখানে বিস্ময়কর ভ্রমণস্থল হলেও বসবাসকারীর সংখ্যা অবাক করা পর্যন্ত কম। কাজাখস্তান, বৎসোয়ানা, অস্ট্রেলিয়া, মঙ্গোলিয়া, নামিবিয়া, লিবিয়া, সুরিনাম, কানাডা, আইসল্যান্ড ও গ্রিনল্যান্ডের মতো দেশগুলো বিশাল অঙ্গনে বিস্তৃত, যেখানে ৯৯ শতাংশেরও বেশি এলাকা মানুষ দিয়ে শূন্য।

এই সব দেশের মিলিত জনসংখ্যা ১৩০ মিলিয়নের কাছাকাছি, যা শুনলে মনে হতে পারে অনেক, কিন্তু তুলনা করলে দেখা যাবে ছোট্ট জাপানের জনসংখ্যার সাথেও সমান, যেখানে প্রতি বর্গমাইলেই গড়ে ৮০০ জন বসবাস করেন। আর গ্রিনল্যান্ডে তো দশ বর্গমাইলেরও বেশি এলাকায় একজনেরও কম মানুষ থাকেন। যুক্তরাজ্যের গড় জনসংখ্যা প্রতি বর্গমাইলে ৭২৩ জন।

এমন বিস্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও কেন এই দেশগুলো এতটাই খালি? এর পেছনে রয়েছে কঠোর জলবায়ু, কঠিন ভৌগোলিক পরিবেশ এবং দীর্ঘ ইতিহাসের মিশ্রণ। গ্রিনল্যান্ডের ব্যাপক বরফচাদর দ্বীপের ৮০ শতাংশ দখল করে আছে, যেখানে ক্রমাগত শীত ও তুষার পর্বতের কারণে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলা মুশকিল। একইভাবে কানাডার বরফঝড়, পাহাড়, বিশাল বনাঞ্চল বড় পরিসরে মানুষের বসবাসে বাধা দেয়। কানাডার ৩.৮৫ মিলিয়ন বর্গমাইলের বিশাল এলাকায় মাত্র ৩৮ মিলিয়ন মানুষ বসবাস করে।

লিবিয়া ও নামিবিয়ার ঝড়ো রোদ আর মরুভূমি মানুষ বসবাসের জন্য একেবারে কঠিন পরিবেশ তৈরি করে। পানির অভাব এবং চাষের অনুপযোগী মাটি মানুষকে শুধু সীমিত কিছু এলাকায় বসবাস করতে বাধ্য করে। নামিবিয়ার ৩১৮,০০০ বর্গমাইলের মধ্যে মাত্র ২৫ লক্ষ মানুষের বসবাসই তার প্রমাণ।

এখানেই থেমে যায় না, একাকীত্বও বড় ভূমিকা রাখে। সুরিনাম ও বৎসোয়ানা বিশাল বন ও সাভান্না এলাকা নিয়ে গড়ে উঠলেও প্রধান বাণিজ্যিক পথে তারা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। সুরিনামের বিশাল জঙ্গলভূমিতে মাত্র ৬ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করেন, যেখানে অনেক অঞ্চল এখনও পথ, শহর থেকে দূরে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও এ দেশের জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করেছে। মঙ্গোলিয়ার নোমাডিক গবাদিপশুপালন ঐতিহ্যের কারণে ৬০৩,০০০ বর্গমাইল বিস্তৃত দেশটিতে মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন, যদিও রাজধানী উলানবাটারে ১৪ লাখের বেশি বসবাস করে।

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া একটু ভিন্ন রূপ নিয়েছে। এর ৯৯ শতাংশ ভূখণ্ড আদৌ জনবহুল না হলেও সিডনি, মেলবোর্নের মতো প্রাণবন্ত শহরগুলো এখানে প্রাণসঞ্চার ঘটায়। তবুও, অস্ট্রেলিয়ার বিশাল আউটব্যাক অঞ্চল এখনও একাকী এবং কম জনবসতিপূর্ণ।

এই ১২টি বিশাল দেশ একত্রে এমন জনসংখ্যা ধারণ করে যা মিশর বা জাপানের থেকেও কম। কারণ সেখানে উর্বর জমি ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলো জনসংখ্যাকে অনেক ঘন করে তুলেছে। তাই এই দেশগুলো পৃথিবীর অন্যতম অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অধিকারী হলেও কঠিন জলবায়ু, কঠিন ভূগোল, সাংস্কৃতিক ইতিহাস এবং একাকীত্ব তাদের পৃথিবীর অন্যতম নির্জন প্রান্ত হিসেবে রেখেছে। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এই শূন্যতা এক অসাধারণ আকর্ষণ, যেখানে মানুষের ভিড় থেকে দূরে, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ রয়েছে।

যারা প্রকৃতির নিস্তব্ধতা আর শূন্যতা উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য এই দেশগুলো এক স্বপ্নময় গন্তব্য হিসেবে গড়ে উঠেছে।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/4auj5rjd

আফরোজা

×