ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিস অ্যাটমিক বম্ব: এক নারী, এক রহস্যের খোঁজে ২৫ বছরের সফল অনুসন্ধান

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১ জুন ২০২৫

মিস অ্যাটমিক বম্ব: এক নারী, এক রহস্যের খোঁজে ২৫ বছরের সফল অনুসন্ধান

ছবি: সংগৃহীত

১৯৫৭ সাল। আমেরিকার নেভাদার মরুভূমিতে চলছে পারমাণবিক পরীক্ষার মহড়া। সেই আতঙ্কের আবহেই লাস ভেগাসে আলো ছড়াচ্ছেন এক হাস্যোজ্জ্বল তরুণী। পরনে পরমাণু বিস্ফোরণের মাশরুম-ক্লাউড আকৃতির সুইমস্যুট, দুহাতে ছড়িয়ে দেওয়া নাট্যদৃশ্যের মতো ভঙ্গিমা।

তাকে ডাকা হয় ‘মিস অ্যাটমিক বম্ব’ নামে। ছবিটি হয়ে যায় মার্কিন পারমাণবিক যুগের প্রতীক, লাস ভেগাসের বিস্ময়কর ফ্যান্টাসি-সংস্কৃতির মুখ। কিন্তু প্রশ্ন ছিল—এই তরুণী আসলে কে ছিলেন?

প্রায় ২৫ বছর ধরে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়িয়েছেন ৮১ বছর বয়সী রবার্ট ফ্রিডরিখস — একজন ইতিহাসবিদ ও সাবেক বিজ্ঞানী।

একটি ছবি, একটি নাম, এবং এক আজীবনের অনুসন্ধান

প্রথম সূত্র: একটি পুরোনো পত্রিকার ছবির নিচে ছাপা ছিল স্টেজনেম ‘Lee A. Merlin’। আর তাতেই শুরু হয় ফ্রিডরিখসের অনুসন্ধান, যা পরিণত হয় এক ব্যক্তিগত যাত্রায়।

‘আমি শুধু জানতে চেয়েছিলাম—কে ছিলেন এই নারী? সে কি এখনো জীবিত?’ বলেন ফ্রিডরিখস। হাতের ছুটি, অবসর, নির্ঘুম রাত সব চলে যায় এই খোঁজে। পুরোনো শো-গার্লদের খুঁজে বের করা, লাইব্রেরির পুরোনো আর্কাইভ ঘেঁটে বের করা একেকটা সূত্র।

ছবির আলোকচিত্রী ডন ইংলিশকে খুঁজে পান তিনি। বন্ধুত্বও হয়। কিন্তু আসল নাম? সেটাই ছিল অধরা।

শেষতক উন্মোচিত রহস্য: Anna Lee Mahoney

২০২৩ সালের শীত। অ্যাটমিক মিউজিয়ামে নিজের গবেষণার ওপর এক বক্তৃতা দিচ্ছিলেন ফ্রিডরিখস। পরদিন এক দর্শক তাকে পাঠান একটি মৃত্যু-সংবাদের কপি। সেখানে উল্লেখ ছিল—ওই নারী একসময় স্যান্ডস হোটেলের প্রধান নৃত্যশিল্পী ছিলেন।

নাম ছিল—আনা লি মাহোনি। জন্ম ১৪ আগস্ট, ১৯২৭, নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্কসে। স্টেজনেম Lee A. Merlin। চলচ্চিত্র ও মঞ্চজগতে কাজের পর তিনি হয়ে উঠেছিলেন স্যান্ডস হোটেলের ‘কোপা শোরুম’-এর প্রধান নৃত্যশিল্পী—যেখানে নিয়মিত আসতেন ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা, লুইস আর্মস্ট্রং, এমনকি গ্যাংস্টাররাও।

নৃত্যজীবনের পর, তিনি হয়ে ওঠেন একজন মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা, বসবাস করেন হাওয়াই ও পরে ক্যালিফোর্নিয়ায়। মৃত্যুবরণ করেন ২০০১ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে।

একটি ছবি, অগণিত গল্প

সেই বিখ্যাত ছবিটি আজও লাস ভেগাস কনভেনশন আর্কাইভের অন্যতম জনপ্রিয় ছবি। ২০১২ সালে হ্যালোইনের জন্য প্লেবয়ের প্রাক্তন মডেল হোলি ম্যাডিসন ছবিটি পুনরায় ধারণ করেছিলেন।

‘ভাবাই যায় না—এক ক্লিক, আর তা ইতিহাস হয়ে যায়,’ আবেগঘন হয়ে বলেন ফ্রিডরিখস।

বন্ধুত্ব, নৃত্যশিল্পীদের গল্প আর এক অধ্যায়ের সমাপ্তি

ডন ইংলিশ, ছবিটি আলোকচিত্রী, মারা যান ২০০৬ সালে। সত্য উদঘাটনের আগেই। তবে ফ্রিডরিখস তার কন্যাকে ফোন করে জানিয়ে দেন—রহস্যের পর্দা ফাঁস হয়েছে।

কোপা গার্লদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটান তিনি—তাদের গল্প শোনেন, যেভাবে তারা ভেগাসের আইকন হয়ে উঠেছিলেন, অথচ অনেক সময়ই ছবির ক্যাপশনে নাম লেখা হতো ভুলভাবে, কিংবা একেবারেই লেখা হতো না।

একসময়, একদল প্রাইভেট গোয়েন্দা এগিয়ে এসে সাহায্য করেন। অবশেষে পাওয়া যায় সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর—যা যুক্ত করে দেয় মিস অ্যাটমিক বম্বের সব নামকে এক পরিচয়ে।

‘এটা শুধু কৌতূহল নয়,’ বলেন ফ্রিডরিখস চোখভেজা গলায়, ‘এটা ইতিহাসের অসম্পূর্ণতা পূরণের চেষ্টা।’

 

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)

রাকিব

আরো পড়ুন  

×