
ছবি: সংগৃহীত
ব্যবসার আয় বাড়াতে কি প্রতি সপ্তাহে আরও ঘণ্টা খাটতে হবে? নাকি এটা সম্ভব যে আপনি অর্ধেক সময় কাজ করেও আয় বাড়াতে পারেন? উদ্যোক্তাদের জন্য এমন সম্ভাবনা বাস্তব করে তুলেছে ‘প্যাসিভ ইনকাম’। এটি একটি আর্থিক কৌশল, যেখানে আপনি ঘুমালেও আপনার ব্যবসা আয় করে চলে।
‘দ্য বিগ এক্সিট’-এর প্রতিষ্ঠাতা লিয়েন ডি পাও সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে ব্যবসা থেকে প্যাসিভ ইনকাম তৈরি করা যায়।
প্যাসিভ ইনকাম
প্যাসিভ ইনকাম অর্থ এমন আয় যা আপনার সরাসরি নিয়মিত শ্রম ছাড়াই আসে। যদিও সম্পূর্ণ “কাজবিহীন” আয় এটা নয়, তবে একবার কিছু সিস্টেম ও ডিজিটাল সম্পদ তৈরি করার পর এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয় এনে দেয়।
এই ধরনের আয় আসে—
- ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করে
- সাবস্ক্রিপশন বা মেম্বারশিপ সার্ভিস চালু করে
- একটি ভিডিও কোর্স বা টেমপ্লেট বিক্রি করে
- সফটওয়্যার তৈরি করে যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে
- লাইসেন্সিং ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে
অনেকে ভাবেন প্যাসিভ ইনকাম মানেই কোনো কাজ ছাড়াই টাকা আসবে। বাস্তবে এর শুরুতে কিছু পরিশ্রম করতে হয়—পণ্য তৈরি, সিস্টেম স্থাপন, মার্কেটিং ইত্যাদি। তবে একবার সেটআপ হয়ে গেলে এটি অনেকটাই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয় নিয়ে আসে।
এটি শুধুমাত্র প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য নয়—পরামর্শক, কোচ, লেখক, ডিজাইনার সবার জন্যই উপযোগী।
কিভাবে শুরু করবেন?
- আপনি ইতিমধ্যে কী ব্যবহার করছেন যা ভালো কাজ করে—তা খুঁজে বের করুন।
- সেটা ডিজিটাল প্রোডাক্ট বা সাবস্ক্রিপশন আকারে রূপ দিন।
- ডেলিভারি স্বয়ংক্রিয় করতে প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন—যেমন ConvertKit, Kajabi, Gumroad।
- নিজের বর্তমান অডিয়েন্সে শেয়ার করুন। ফিডব্যাক নিন, উন্নতি করুন।
৯টি কার্যকরী প্যাসিভ ইনকাম আইডিয়া
১. ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি করুন
আপনার তৈরি করা যেকোনো কার্যকর টেমপ্লেট, চেকলিস্ট, ফর্মুলা বা গাইড PDF আকারে সাজিয়ে অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ—
- ফ্রিল্যান্স কনট্রাক্ট টেমপ্লেট
- সোশ্যাল মিডিয়া কনটেন্ট প্ল্যানার
- ছোট ব্যবসার এক্সেল হিসাব টুল
এই প্রোডাক্টগুলো Gumroad, Payhip বা আপনার নিজের ওয়েবসাইটে হোস্ট করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিক্রি করতে পারবেন।
২. মিনি অনলাইন কোর্স বানান
বড় কোর্স নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট সমস্যার সহজ সমাধান, এই লক্ষ্য নিয়ে মাত্র ৩০–৬০ মিনিটের একটি কোর্স তৈরি করতে পারেন। উদাহরণ:
- ১০ দিনে কন্টেন্ট রাইটিং শেখা
- ইনস্টাগ্রাম বিজনেস প্রোফাইল সেটআপ
এই কোর্সগুলো Teachable, Thinkific, বা Kajabi-তে হোস্ট করতে পারেন।
৩. পেইড নিউজলেটার চালু করুন
আপনি যদি নিয়মিত কোনো বিষয়ে লেখেন, তবে Substack বা Beehiiv-এর মাধ্যমে পেইড নিউজলেটার চালু করতে পারেন। উদাহরণ:
- সপ্তাহে একবার ডিজিটাল মার্কেটিং টিপস
- মাসিক বিনিয়োগ অ্যানালাইসিস
- শ্রোতার জন্য প্রিমিয়াম কনটেন্টের বিনিময়ে সাবস্ক্রিপশন ফি নিতে পারেন।
৪. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করুন
আপনি যে সফটওয়্যার, অ্যাপ বা বই ব্যবহার করে উপকার পেয়েছেন—তা অন্যদের সুপারিশ করে কমিশন পেতে পারেন। Amazon, Coursera, Canva, বা Notion-এর মতো বহু প্ল্যাটফর্ম অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম দেয়। নিজের ব্লগ, ইউটিউব ভিডিও বা ফেসবুক পোস্টে লিংক যুক্ত করে সহজেই আয় করা যায়।
৫. কনটেন্ট লাইসেন্স দিন
আপনার তৈরি কোনো কোর্স, কর্মশালা, টুলকিট বা ট্রেইনিং মডেল যদি অন্য কোচ বা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করতে চায়, তাহলে সেটি লাইসেন্স দিয়ে উপার্জন করতে পারেন।
একটি কোচিং প্রতিষ্ঠান আপনার কোর্স ব্যবহার করতে চাচ্ছে, আপনি তাদেরকে নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে লাইসেন্স দিন। এতে আপনি বারবার একই কনটেন্ট বিক্রি করতে পারেন।
৬. অব্যবহৃত সম্পদ ভাড়া
যে সম্পদ আপনার কাজে লাগছে না, তা ভাড়া দিয়ে আয় শুরু করুন।
- অফিস স্পেস/ডেস্ক
- ক্যামেরা, ট্রাইপড বা মাইক্রোফোন
- গাড়ি বা প্রিন্টিং যন্ত্র
একটি নির্ভরযোগ্য লোকাল মার্কেটপ্লেস বা ফেসবুক গ্রুপে বিজ্ঞাপন দিয়ে শুরু করতে পারেন।
৭. সফটওয়্যার টুল তৈরি
আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট সমস্যার জন্য একটি ছোট টুল তৈরি করে থাকেন—যেমন:
- কনটেন্ট আইডিয়া জেনারেটর
- ইনভয়েস জেনারেটর
- সোশ্যাল মিডিয়া টাইম ম্যানেজার
তাহলে সেটিকে একটি ছোট সাবস্ক্রিপশন বা ওয়ান-টাইম পেমেন্টে বিক্রি করতে পারেন।
৮. এক্সক্লুসিভ কনটেন্ট সাবস্ক্রিপশন
আপনার ফলোয়ারদের জন্য মাসিক সাবস্ক্রিপশন চালু করে বিশেষ কনটেন্ট দিন, যেমন:
- ভিডিও টিউটোরিয়াল
- মাসিক প্রশ্নোত্তর সেশন
- এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট বা অ্যানালাইসিস
Patreon, Ko-fi, বা Facebook Subscription সুবিধা ব্যবহার করে এটা সম্ভব।
৯. পূর্বের ওয়েবিনার বা কোর্স রিপ্যাকেজ
আপনি যদি আগে কোনো ওয়েবিনার বা লাইভ সেশনের রেকর্ডিং করে থাকেন, তা রিপ্যাকেজ করে নতুনভাবে বিক্রি করতে পারেন।
- ওয়েবিনার রেকর্ড করে “ওন-ডিমান্ড” কোর্সে রূপ দিন
- কয়েকটি ভিডিও একসাথে “বান্ডল” আকারে বিক্রি করুন
এর ফলে একবার কাজ করে বহুবার ইনকাম করা সম্ভব। এই উপায়গুলো একদিকে যেমন আয় বাড়ায়, তেমনি ব্যবসার বিক্রয়যোগ্যতাও বাড়ায়।
মুমু