ছবি: সংগৃহীত
পৃথিবীতে মানুষ কী না খায়! কেউ খায় সাপ, কেউ ব্যাঙ, কেউ আবার বাদর কিংবা ঘোড়া। রুচি আর অভ্যাসের ভিন্নতায় একেকজনের পাতে উঠে আসে একেক রকম খাবার। তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা বিশ্ববাসীকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। যেমন—বাংলাদেশে ঘোড়ার মাংস খাওয়ার খবর অনেককে চমকে দিয়েছিল। আর এবার ইউরোপে শুরু হতে যাচ্ছে আরও চাঞ্চল্যকর এক অধ্যায়—ভাল্লুক খাওয়া।
বিশ্বাস না হলেও সত্যি, স্লোভাকিয়ায় খুব শিগগিরই বাজারে বিক্রি হতে যাচ্ছে বাদামি ভাল্লুকের মাংস। অথচ এই প্রজাতির ভাল্লুক ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংরক্ষিত প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। তবে স্লোভাকিয়া সরকার বলছে, এই প্রাণী এখন জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনের পাশ ঘেঁষে বসবাসকারী মানুষের উপর হামলার ঘটনা বাড়ছে। সে কারণেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৩৫০টি ভাল্লুক গুলি করে মারা হবে। এবং প্রাণীগুলো হত্যা করার পর সেগুলোর মাংস বাজারে বিক্রি করে ফেলা হবে—যাতে ‘অপচয়’ না হয়।
এই ঘোষণার পরপরই তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। পরিবেশবিদরা ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একাধিক সদস্য একে বলছেন—নিষ্ঠুরতা এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি। কারণ ভাল্লুকের মাংসে থাকে Trichinella নামক এক ধরনের মারাত্মক পরজীবী। এই জীবাণু ঠিকমতো সেদ্ধ না হলে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে জটিল ও প্রাণঘাতী রোগের সৃষ্টি করতে পারে। শুধু ফ্রিজে সংরক্ষণ বা ধোয়ার ঝুলিয়ে রাখলেই এই জীবাণু নষ্ট হয় না। ভাল্লুকের মাংসের গভীর অংশে অন্তত ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা না পৌঁছালে এর ঝুঁকি থেকেই যায়।
স্লোভাকিয়ায় ইতিমধ্যে ভাল্লুক ও মানুষের সংঘর্ষ একটি রাজনৈতিক বিতর্কে রূপ নিয়েছে। অনেকেই বলছেন, বনাঞ্চল সংকুচিত হওয়ায় ভাল্লুকদের আবাসস্থল নষ্ট হচ্ছে। এতে করে তারা মানুষের বসতির কাছাকাছি চলে আসছে। সরকার বরং এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করে ভাল্লুক মারার মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে।
প্রশ্ন হলো—এই সিদ্ধান্ত কি আদৌ যুক্তিসঙ্গত? পৃথিবীর খাবারের তালিকা দিন দিন অদ্ভুত থেকে অদ্ভুততর হয়ে উঠছে। আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিতর্ক, আতঙ্ক আর প্রশ্ন। আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি? ভাল্লুকের মাংস কি হতে চলেছে ভবিষ্যতের বিলাসবহুল খাবার? নাকি এটি এক ভয়ঙ্কর ভুল, যার খেসারত দিতে হবে মানবজাতিকেই?
সময়ই দেবে উত্তর। তবে এখনই প্রশ্ন তোলা জরুরি—খাদ্যাভ্যাসের নামে আমরা কি বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ ধ্বংসের পথে হাঁটছি না?
ফরিদ
