
ছবি: সংগৃহীত
সুস্থ থাকতে চাইলে শুধু ওষুধ নয়, প্রয়োজন সময়মতো রোগ নির্ণয়ও। অথচ আমাদের সমাজে এখনো অনেকেই পরীক্ষার গুরুত্ব বুঝে উঠতে পারেন না, কিংবা রিপোর্ট হাতে পেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না। এতে করে সাধারণ রোগও জটিল আকার ধারণ করে।
রোগ নির্ণয়ের জন্য আমাদের দেশে বর্তমানে নানা রকম আধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে—রক্ত পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, ইসিজি, এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাম, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ও মেমোগ্রাফি ইত্যাদি।
রক্ত পরীক্ষা: এক বহুমুখী জানালার দরজা
রক্ত পরীক্ষা সবচেয়ে সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্ণয় পদ্ধতি। এর মাধ্যমে জানা যায় শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, রক্তে শর্করার পরিমাণ (ডায়াবেটিস), চর্বির মাত্রা (কোলেস্টেরল), এমনকি কোনো ক্যান্সার শরীরে গোপনে বাসা বেঁধেছে কি না। অনেক সময় চিকিৎসক রক্তের মাধ্যমে যকৃত, কিডনি বা হরমোনজনিত সমস্যার কথাও জানতে চান।
প্রস্রাব পরীক্ষা: ছোট অথচ সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ
প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় শরীরে কোনো ইনফেকশন আছে কি না, চিনি বা প্রোটিন নির্গত হচ্ছে কি না, অথবা কিডনির সমস্যার কোনো ইঙ্গিত আছে কি না। এই পরীক্ষাটিও সঠিক সময়ে করলে রোগ ধরা পড়া সহজ হয়।
ইসিজি ও ইকো: হৃদয়ের বার্তা শোনা
হৃদরোগ নির্ণয়ে ইসিজি একটি প্রাথমিক এবং দ্রুত ফলদায়ী পরীক্ষা। যদি আরও বিস্তারিত প্রয়োজন হয়, তবে চিকিৎসক ইকোকার্ডিওগ্রাফি করতে বলেন। এই পরীক্ষায় হৃদযন্ত্রের গঠন ও কার্যক্ষমতা বিশ্লেষণ করা হয়।
এক্স-রে, সিটি স্ক্যান ও এমআরআই: শরীরের গভীরে দেখা
এক্স-রে হলো সহজ ও প্রাথমিক চিত্রায়ন পদ্ধতি। তবে জটিল ও গভীর সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে করতে হয় সিটি স্ক্যান ও এমআরআই। অনেকেই মনে করেন এগুলো শুধু মাথার সমস্যা জানার জন্য, কিন্তু বাস্তবে শরীরের যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ—যেমন পেট, ফুসফুস, হাড়, স্পাইন, এমনকি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের টিউমারও এসব পরীক্ষায় ধরা পড়ে।
আল্ট্রাসোনোগ্রাম ও মেমোগ্রাফি: অভ্যন্তরীণ দেখার অনন্য পদ্ধতি
আল্ট্রাসোনোগ্রাম শুধু পেটের সমস্যা নির্ণয়ে নয়, এটি ব্যবহার করা হয় থাইরয়েড, বুক, এমনকি শরীরের যেকোনো টিউমার সনাক্তে। নারীদের জন্য স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে রয়েছে মেমোগ্রাফি নামের একটি বিশেষ চিত্রায়ন পদ্ধতি। এখন অনেক কম বয়সী নারীর মধ্যেই স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ছে, তাই সচেতনতা জরুরি।
ভুল রিপোর্ট নিয়ে বিভ্রান্তি নয়, দ্বিতীয় মতামত জরুরি
অনেক সময় রোগী বা স্বজনরা রিপোর্ট দেখে বলেন, “রোগের উপসর্গ তো আছে, কিন্তু রিপোর্টে কিছু ধরা পড়েনি।” এমন ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করাই সঠিক পন্থা। রোগের উপসর্গ ও পরীক্ষার রিপোর্টের মধ্যে যদি অমিল থাকে, তবে চিকিৎসক প্রয়োজনমতো পুনরায় পরীক্ষা করাতে পারেন বা ভিন্ন কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
মাদকাসক্তি নির্ণয়ে ল্যাব পরীক্ষার ভূমিকা
আজকাল মাদকাসক্তির হার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। যদি পরিবারের কারও আচরণে সন্দেহ দেখা দেয়, তবে ড্রাগ টেস্টের মাধ্যমে জানা সম্ভব—তিনি কোনো নিষিদ্ধ দ্রব্য গ্রহণ করছেন কি না।
চিকিৎসককে এড়িয়ে নয়, পাশে রাখুন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সেটি নিজে বিশ্লেষণ না করে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো। অনেকেই রিপোর্ট ‘নরমাল’ ভেবে অবহেলা করেন, অথচ চিকিৎসকের দৃষ্টিতে সেটিই হতে পারে একটি সম্ভাব্য বিপদের ইঙ্গিত।
সঠিক সময়ে সঠিক রোগ নির্ণয়, এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া—এই দুইটি কাজই পারে আমাদের জীবনের পথ সহজ করে তুলতে।
ফরিদ