ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফাঁদে ফেলে তরুণীদের বিক্রি করে দিচ্ছে চীনা যুবকদের কাছে!

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১ জুন ২০২৫

ফাঁদে ফেলে তরুণীদের বিক্রি করে দিচ্ছে চীনা যুবকদের কাছে!

ছবি: সংগৃহীত

রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে বাংলাদেশের তরুণীদের জীবনে নামিয়ে আনা হচ্ছে বিভীষিকা। ‘বিয়ের’ নামে চীনা নাগরিকদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে এই সর্বনাশ। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কীভাবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তরুণীদের ফাঁদে ফেলে চীনে পাচার করা হচ্ছে। ভয়ঙ্কর এই চিত্র তুলে ধরেছে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৯৮০-এর দশকে চীনে ভ্রূণ হত্যার প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। পরিবারগুলো ছেলে সন্তান পছন্দ করায় কন্যাভ্রূণ গর্ভেই নষ্ট করে দেওয়া হতো। ফলে সময়ের ব্যবধানে দেশটিতে মেয়ের চেয়ে ছেলের সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যায়, বিশেষত গ্রামীণ এলাকায়।

বর্তমানে সেই সময়ের ছেলেরা বিবাহযোগ্য বয়সে পৌঁছেছে, কিন্তু পাত্রী সংকট ভয়াবহ। এই ঘাটতি মেটাতে চীনা দালাল চক্র নজর দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দিকে। বাংলাদেশ, নেপাল, মিয়ানমারসহ দরিদ্র ও প্রত্যন্ত এলাকার তরুণীদের ‘ভালো কাজ’ ও ‘উন্নত জীবনের’ লোভ দেখিয়ে চীনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন—চীনে পৌঁছেই কাগজপত্র কেড়ে নেওয়া হয়, চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং এক সময় তাদের জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় অচেনা চীনা পুরুষদের সঙ্গে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব তরুণীদের ৫,০০০ থেকে ২০,০০০ মার্কিন ডলারে বিক্রি করা হয়—মূল্য নির্ধারণ হয় বয়স ও সৌন্দর্যের ভিত্তিতে। এই বিক্রিকে বৈধতা দিতে ‘বিয়ে’র আড়াল ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী নারীর সম্মতি থাকে না। বিয়ের পর তাদের চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আটকে রাখা হয়, এমনকি দ্রুত সন্তান নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, মিয়ানমারের পর এখন বাংলাদেশ ও নেপাল হচ্ছে এই চক্রের প্রধান টার্গেট। দালালরা ‘বিদেশি বউ’ পাওয়ার লোভ দেখিয়ে চীনের কৃষক ও নিম্নবিত্ত পুরুষদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। আর এসব নারীরা দুঃসহ জীবনের মুখোমুখি হচ্ছেন।

এমনকি কেউ পালাতে চাইলে, অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চীনা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে শাস্তি পাচ্ছেন। ২৫ মে চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস নিজ দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশি নারীদের বিয়ে না করতে সতর্ক করেছে। কারণ এতে উভয় পক্ষই প্রতারণার শিকার হতে পারে।

চীনের এই সংকটের মূল কারণ লিঙ্গ বৈষম্য। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০০ সালে প্রতি ১২১টি ছেলে শিশুর বিপরীতে জন্মেছে মাত্র ১০০টি মেয়ে শিশু। এর ফলে অনুমান করা হচ্ছে—২০২০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৫ কোটি চীনা পুরুষ অবিবাহিত থেকে যাবেন। এমন পরিস্থিতিতে বিবাহযোগ্য নারীর ঘাটতি মেটাতে বিয়ের বয়স কমানোর দাবিও উঠেছে দেশটিতে।

সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিঙ্গাও জানান, এই চাহিদা মেটাতে চীনের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে শিশু ও তরুণীদের অবৈধভাবে এনে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে বেড়ে যাচ্ছে নারী পাচার ও জোরপূর্বক বিয়ের হার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বহু নারী দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব ও গ্রামীণ পটভূমির কারণে সহজেই ফাঁদে পড়ছেন। ফলে বাংলাদেশ এখন মানবপাচারকারীদের নতুন গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।

 

ফরিদ 

আরো পড়ুন  

×