
ছবিঃ সংগৃহীত
কোরবানি ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। এই ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য, ত্যাগ ও বিসর্জনের শিক্ষা পাওয়া যায়।
হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে সব নবীর যুগেই কোরবানি পালিত হয়ে আসছে। কোরবানির বিধান কেবল একটি ধর্মীয় রীতিই নয়, বরং তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রতীক। এই ত্যাগের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ রেখেছেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)।
আল কোরআনে বলা হয়েছে—“প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কোরবানির বিধান নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যা তিনি তাদের জীবিকা হিসেবে দান করেছেন।” (সূরা হজ, আয়াত ৩৪)
পশু নির্বাচনে সতর্কতা জরুরি
কোরবানির পশু নির্বাচনের সময় শুধুমাত্র দাম নয়, বরং শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করাটাই প্রধান বিষয়। পশুটি যেন সুস্থ ও রোগমুক্ত হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন—রাসূলুল্লাহ (সা.) শিংযুক্ত, মোটা-তাজা একটি মেষ কোরবানি করেছিলেন, যার চোখ, মুখ ও পা ছিল মিটমিটে কালো। (তিরমিজি)
যেসব ত্রুটি থাকলে কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে না:
ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট ত্রুটি থাকলে কোরবানির পশু গ্রহণযোগ্য হয় না। সেগুলো হলো:
-
একেবারে অন্ধ (চোখে একদমই দেখতে পায় না) পশু
-
স্পষ্টভাবে অসুস্থ পশু
-
যেকোনো অঙ্গ দুর্বল বা ভাঙা হওয়ায় চলাফেরায় অসুবিধা হয় এমন পশু
-
দাঁত এমনভাবে পড়ে গেছে যে ঠিকমতো খাবার চিবাতে পারে না
-
শিং সম্পূর্ণ গোড়া থেকে ভাঙা পশু (অর্ধেক ভাঙলে বা জন্মগতভাবে না থাকলে সমস্যা নেই)
-
কান বা লেজ অর্ধেক বা তার বেশি কাটা হলে কোরবানি বৈধ নয় (তবে অর্ধেকের কম কাটা হলে বা জন্মগতভাবে ছোট হলে সমস্যা নেই)
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা
হজরত আলী (রা.) বলেন—“রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের নির্দেশ দিতেন যেন কোরবানির পশুর কান ও চোখ ভালোভাবে যাচাই করি এবং তিনি নিষেধ করতেন এমন পশু দ্বারা কোরবানি করতে যার কান কাটা, ছেঁড়া বা ছিদ্র করা।” (আবু দাউদ)
উপসংহার
কোরবানির পশু কেনার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে—পশুটির চোখ, কান, লেজ এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিক আছে কি না। কারণ, কোরবানি কেবল একটি রীতিমাত্র নয়, এটি ইমান, ত্যাগ ও আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ। আর সেই ইবাদত যেন শরিয়তের নির্দেশ অনুযায়ী সঠিকভাবে পালন হয়, সেটাই আমাদের দায়িত্ব।
ইমরান