‘আমরা সর্বস্বান্ত’: নাইজেরিয়ায় বন্যায় ১৫১ জনের মৃত্যু, হাজারো মানুষ বাস্তুহারা

মধ্য নাইজেরিয়ার নাইজার রাজ্যের ছোট শহর মোকওয়ায় ভয়াবহ বন্যায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনও উদ্ধারকারীরা নিখোঁজদের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্তত ৩ হাজার ১৮ জন মানুষ প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন, আর ২৬৫টি ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

নাইজার রাজ্যের জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার (এনএসইএমএ) মুখপাত্র ইব্রাহিম আউদু হুসেইনি শনিবার (৩১ মে) জানান, মোকওয়ায় বন্যার জেরে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। মরদেহগুলো শহরের প্রায় ১০ কিলোমিটার দূর থেকে পাওয়া গেছে। তবে আল জাজিরার প্রতিবেদক আহমেদ ইদ্রিসের মতে, এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। ‘সরকারি তথ্য অনুযায়ী ১৫১ জন মৃত বা নিখোঁজ, কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যাটি দুই থেকে চারগুণ বেশি হতে পারে,’ বলেন তিনি।

বন্যার স্রোতে অনেকেই নাইজার নদীতে ভেসে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, আর মৃতের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা এখনও রয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ টানকো আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমরা সব কিছু হারিয়েছি, আমরা সর্বস্বান্ত, পরিবারের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, আমাদের সম্পত্তি সব বিলীন হয়ে গেছে।’
অন্য এক বন্যাদুর্গত জানান, ‘আমি শুধু আমার রাতের পোশাকটা নিয়েই পালিয়ে এসেছি। এখন আর বলতে পারছি না আমাদের বাড়ি কোথায় ছিল।’

ইদ্রিস বলেন, ‘আমরা যখন আসি, তখন স্থানীয়রা বলেছিল বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করার পর আরও গ্রাম থেকে মরদেহ ভেসে আসছে। এখানে ৩০০টির বেশি বাড়ি বন্যার পানিতে ধুয়ে গেছে বা ধ্বংস হয়েছে।’

স্থানীয়রা মনে করছেন, বন্যার কারণ ‘কোনো বড় সমস্যা, হয়তো কোনো বাঁধ ভেঙে যাওয়া’। তবে এখনো এ বিষয়ে সরকারি কোনো ঘোষণা হয়নি।

আরও বৃষ্টির আশঙ্কা

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিন আরও বৃষ্টি হতে পারে, যা এলাকায় নতুন করে বন্যার ঝুঁকি বাড়াবে। নাইজেরিয়ায় বর্ষাকাল ছয় মাসের, এবং এই সময় বন্যা সাধারণ সমস্যা হলেও জলবায়ু পরিবর্তন, নির্মাণকাজে অব্যবস্থাপনা ও দুর্বল পানীয় নিষ্কাশন ব্যবস্থা এসব দুর্যোগকে আরও তীব্র করে তুলছে।

বিশেষজ্ঞ উগোনা নকুনোনো বলেন, ‘প্রতি বছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই বন্যা হয়, কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে সঠিক ব্যবস্থা নেয়া হয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বৃষ্টিপাতের মাত্রা এতো বেড়ে গেছে যে, যা এক বছরে হওয়ার কথা, এখন তা এক বা দুই মাসে হয়ে যাচ্ছে। মানুষ প্রস্তুত নয় এমন জলবায়ুর জন্য।’

গত বছর এমন বন্যায় প্রায় ১২০০ জনের বেশি নিহত এবং প্রায় দুই লাখ মানুষ বাস্তুহারা হন।

নাইজেরিয়ার জাতীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা (ন্যামা) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই দূর্যোগ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, জলপথের পাশে অবৈধ নির্মাণ কতটা বিপজ্জনক এবং পানীয় নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও নদীর প্রবাহপথ পরিষ্কার রাখার গুরুত্ব।’

সূত্র: আল জাজিরা।