
ছবি: সংগৃহীত
ইসরাইলের ফুটবল স্টেডিয়ামে ইসরাইল প্রেসিডেন্ট আইজেক হারজোগ সাইরেন বাজতেই আতঙ্কে স্ত্রীকে নিয়ে উঠে দাঁড়ান। নিরাপত্তা রক্ষীদের সহায়তায় মুহূর্তেই তারা স্টেডিয়াম ছেড়ে পালিয়ে যান। এই ঘটনা ঘটে ইসরাইল কাপের ফাইনাল ম্যাচ চলাকালীন, যেখানে ম্যাচটি হচ্ছিল বেইতার জেরুজালেম ও হাবুওয়েল বেয়ারশেভার দলের মধ্যে।
হঠাৎ সাইরেন বাজে ওঠে এবং খবর আসে হুথির ভয়াবহ হামলা আসছে। গাজায় দীর্ঘদিন ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইয়েমেনের হুথিরা ক্রমাগত সামরিক চাপ বাড়াচ্ছে। এখন তারা শুধুমাত্র বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ না থেকে সরাসরি ইসরাইলের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে।
আনসারুল্লাহ আন্দোলনের প্রধান আব্দুল মালিক বদরুদ্দিন আল হুথি এক ঘোষণায় জানান, “ইসরাইলি আগ্রাসন এক বছর ছয় মাস ধরে চলছে। আমাদের প্রতিরোধ থামবে না। বরং এখন থেকে আরও বেশি সুনির্দিষ্ট ও ভয়াবহ হবে আমাদের পরবর্তী হামলা।”
বই অনুসারে, ইয়েমেনি বাহিনী ইতিমধ্যে ইসরাইলের জাফা, হাইফা, আশকেলন ও উম্মে আল রাসা শহরে ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর পাশাপাশি লোহিত সাগরের রুট ব্যবহার করে চলা ইসরাইলি সামরিক ও বাণিজ্যিক জাহাজ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ইয়েমেনী সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারে নিশ্চিত করেছেন হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরাইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক স্থাপনাগুলোর একটি বেনগুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তার দাবির পর সেখানে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
এই হামলার পর তেল আবিবজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আনসারুল্লাহর উপতথ্যপ্রধান নাসরুদ্দিন আমের বলেন, “বেনগুরিয়ন এখন আর নিরাপদ নয়। গাজার উপর অবরোধ ও হত্যাযোগ্য বন্ধ না হলে বিদেশী ফ্লাইট চলাচলও অসম্ভব হয়ে উঠবে।”
এই সক্রিয় সামরিক হামলার ফলে ইসরাইল কেবল সামরিক চাপেই নয়, কূটনৈতিক ও মানসিক চাপেও পড়েছে। যুদ্ধ এখন আর গাজার সীমানায় সীমাবদ্ধ নেই, তা ছড়িয়ে পড়ছে আকাশপথ, সাগরপথ এবং স্থলভাগে ইসরাইলের ভেতরেও।
প্রেসিডেন্টের পালানো বিমানবন্দরে হামলা ও স্টেডিয়ামে ছড়ানো আতঙ্ক একসঙ্গে মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্যে নতুন এক অধ্যায় শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় ইসরাইলের বর্বর আগ্রাসনের জবাবে এবার শুধু নিন্দা ও প্রতিবাদ নয়, বাস্তব সামরিক প্রতিরোধ শুরু করে দিয়েছে ইয়েমেনের হুথিরা। গাজা, লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেন জুড়ে গড়ে উঠেছে নতুন এক প্রতিরোধ বলয়, যার সামনে ইসরাইলের ভেতরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা টালমাটাল হয়ে পড়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই পরিস্থিতি কতদূর যাবে? ইসরাইল কি হুথিদের ভয়াবহ প্রতিরোধ থামাতে পারবে, নাকি এই প্রতিরোধের ঢেউয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্য হেলে পড়বে? হুথিদের ভাষায় এখন যুদ্ধ শুধু শুরু হয়েছে মাত্র। অর্থাৎ কপালে শনি আছে ইসরাইলের।
ফরিদ