
বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট এসব সাধারণ উপসর্গের পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে প্রাণঘাতী হৃদরোগ। অনেক ক্ষেত্রেই রোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে নিরব থাকে। ফলে গুরুত্ব না দিলে সময়ের আগেই ঘটতে পারে মারাত্মক বিপদ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগের ধরন ভেদে উপসর্গে ভিন্নতা থাকলেও কিছু লক্ষণ প্রায় সবক্ষেত্রেই কমন। হৃদযন্ত্রের অসুখ নিয়ে সচেতন থাকার জন্য এসব উপসর্গ সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি।
সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ
বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি:
বুকে ব্যথা মানেই যে হৃদরোগ তা নয়, তবে এমন উপসর্গকে অবহেলা করা উচিত নয়। এটি ব্যথা, চাপ, জ্বালা, ঘন ঘন চাপচাপ ভাব বা অসাড়তা হিসেবে দেখা দিতে পারে। ব্যথা অনেক সময় গলা, চোয়াল, পিঠ, হাত বা পেটের উপরের অংশে ছড়িয়ে পড়ে। কারও ক্ষেত্রে ব্যথা এক সেকেন্ডের কম সময়ও থাকতে পারে, আবার কারও ক্ষেত্রে তা দিনের পর দিন স্থায়ী হয়। ব্যথার ধরণ ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে চিকিৎসক রোগ নির্ণয়ে এগোতে পারেন।
বুক ধড়ফড় করা (প্যালপিটেশন):
হৃদস্পন্দনের ছন্দপতন, হঠাৎ দ্রুতগতি, বা অসাধারণ জোরে স্পন্দন অনেক সময় হৃদরোগের ইঙ্গিত হতে পারে। কেউ কেউ হৃদস্পন্দনে 'গ্যাপ' বা 'লাফিয়ে ওঠা' অনুভব করেন। এর পেছনে থাকতে পারে অ্যারিদমিয়া, অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাঘাত। সাধারণত 'প্রিম্যাচিউর অ্যাট্রিয়াল কমপ্লেক্স (PAC)', 'প্রিম্যাচিউর ভেন্ট্রিকুলার কমপ্লেক্স (PVC)', অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন বা সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়ার মতো সমস্যাই এর কারণ হয়ে থাকে। তবে অনেক সময় বিপজ্জনক অ্যারিদমিয়ার কারণেও এটি হতে পারে।
হঠাৎ মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা:
মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো বা চোখে অন্ধকার দেখার পেছনে হৃদরোগ ছাড়াও অ্যানিমিয়া, ডায়াবেটিস, ডিহাইড্রেশন, থাইরয়েড সমস্যা, স্নায়বিক রোগ কিংবা রক্তচাপজনিত সমস্যাও দায়ী হতে পারে। তাই এমন উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দিনে ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা:
শরীর দুর্বল লাগে, আগের মতো কাজের উৎসাহ নেই, বা দিনে দিনে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ার প্রবণতা থাকলে সেটিও হৃদরোগের ইঙ্গিত হতে পারে, বিশেষ করে হার্ট ফেলিউরের ক্ষেত্রে। তবে ঘুমের জটিলতা, যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া, ইনসমনিয়া, রেস্টলেস লেগ সিনড্রোমের মতো সমস্যাও এর পেছনে কাজ করতে পারে।
শ্বাসকষ্ট (ডিসপনিয়া):
শারীরিক পরিশ্রমে বা শুয়ে থাকার সময় শ্বাসকষ্ট অনুভব করা হলে সেটি হার্ট ফেইলিউর, করোনারি আর্টারি ডিজিজ, বা হার্টের ভাল্বজনিত রোগের লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় রাতে ঘুম ভেঙে দমবন্ধ অনুভব করাও (পারক্সিসমাল নকচারনাল ডিসপনিয়া) হৃদযন্ত্রের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (সিনকোপ):
হঠাৎ জ্ঞান হারানো অনেক সময় তেমন গুরুতর না হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি জীবনঝুঁকির পূর্বাভাস হতে পারে। নিউরোলজিক, মেটাবলিক, ভাসোমোটর বা কার্ডিয়াক কারণে অজ্ঞান হওয়া ঘটে। এদের মধ্যে কার্ডিয়াক সিনকোপ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কারণ এটি হঠাৎ মৃত্যু ঘটাতে পারে। তীব্র মানসিক চাপ বা রক্ত দেখে অজ্ঞান হওয়া 'ভাসোভেগাল সিনকোপ' সাধারণ হলেও, পুনরাবৃত্তি হলে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
নির্দিষ্ট রোগ অনুযায়ী উপসর্গ
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস (রক্তনালীতে চর্বি জমা):
এতে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হাত-পা ঝিনঝিনে ভাব বা দুর্বলতা, গলা, চোয়াল বা পিঠে ব্যথা, বমিভাব, ক্লান্তি দেখা দিতে পারে।
হার্ট অ্যারিদমিয়া:
হৃদস্পন্দনের গতি খুব বেশি বা কম হলে, বুকে চাপ, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়া পর্যন্ত ঘটতে পারে।
হার্ট ভাল্বের সমস্যা:
যদি হার্টের চারটি ভাল্বের কোনো একটি সঠিকভাবে কাজ না করে, তবে শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, পায়ে ফোলা, বুকে ব্যথা, এমনকি অজ্ঞান হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
হার্ট ইনফেকশন (সংক্রমণ):
জ্বর, কাঁপুনি, রাতের ঘামে ভেজা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, দুর্বলতা, হাত-পায়ে ফোলা, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, শুকনো কাশি, ত্বকে র্যাশ বা অস্বাভাবিক দাগ, ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
হার্ট ফেইলিউর:
যখন হৃদপিণ্ড শরীরের চাহিদা অনুযায়ী রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখন এটি ঘটে। শুরুতে উপসর্গ পরিষ্কার নাও হতে পারে। পরে ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, দ্রুত ও অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, পা বা পায়ের ফোলা, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা ও হালকা পরিশ্রমেই কষ্ট অনুভব হওয়া দেখা দেয়।
সূত্র:https://tinyurl.com/46fxkvkm
আফরোজা