ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জর্জিয়ার দুর্গম পাহাড়ে মৃত উদ্ধার যমজ দুই ভাই, মৃত্যুরহস্য সমাধান করল পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৩০ মে ২০২৫; আপডেট: ০৫:১৫, ৩০ মে ২০২৫

জর্জিয়ার দুর্গম পাহাড়ে মৃত উদ্ধার যমজ দুই ভাই, মৃত্যুরহস্য সমাধান করল পুলিশ

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী অ্যাটলান্টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরত্বে, বেল মাউন্টেনের চূড়ায় যমজ ভাই কাদির ও নাজির লুইসের মরদেহ উদ্ধার হয়। তদন্ত শেষে পুলিশ জানিয়েছে, তারা একসাথে আত্মহত্যা করেছেন।

১৯ বছর বয়সী দুই ভাই কাদির ও নাজির লুইস পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে জন্মেছিলেন। তারা একসঙ্গে থাকতেন বেশিরভাগ সময়েই, তাদের পছন্দ-আসক্তিও ছিল একই রকম – লাল রং, আর ডিজনির ‘দ্য প্রিন্সেস অ্যান্ড দ্য ফ্রগ’ সিনেমা। একজন যেখানে যেতেন, অন্যজনও সেখানে।

আত্মীয় স্বজনরা তাদের ডাকতেন ‘ডিং-ডং জোড়া’–একসাথে চলার সেই গুণে। তাদের খালা সাবরিয়া ব্রাউনর বলেন, ‘তারা একে অপরের সঙ্গে এতটাই আবদ্ধ ছিল, যেন ডিং-ডং করে দরজার ঘণ্টা।’

দুই ভাইয়ের বড় স্বপ্ন ছিল নিজেদের ২০ বছর পূর্তি জন্মদিন উদযাপন করতে ক্রুজ ভ্রমণ এবং ব্যবসায়ী হওয়ার লক্ষ্য। কিন্তু গত ৮ মার্চ দুর্গম বেল মাউন্টেনের চূড়ায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের লাশ পাওয়া গেলে পরিবারে ভয়াবহ শোক নেমে আসে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ধরে নিয়েছিল এটি একটি হত্যাকাণ্ড ও আত্মহত্যার মিশ্র ঘটনা। তবে পরিবার এমন ভেবে অস্বীকার করেছিল, ‘তারা একে অপরকে কোনো ক্ষতি করবে না,’ খালা ইয়াসমিন ব্রাউনর ফেসবুকে বলেছিলেন।

কিন্তু বুধবার (২৮ মে) জর্জিয়া গোয়েন্দা ব্যুরো (জিবিআই) জানিয়েছে, মৃত্যুর তদন্তে প্রমাণ মিলেছে – ফোরেনসিক প্রমাণ এবং তাদের মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট ইতিহাসে আত্মহত্যা সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া গেছে।

জিবিআই কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ফেসবুকে তাদের পরিবারের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তদন্তের সিদ্ধান্তে আমরা আপাতত সন্দিহান, মনে হয় দ্রুত ও অপ্রতুল তদন্ত হয়েছে।’

পরিবারের কাছে এখনো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, এমন দুই উদ্যমী যুবক কেন তাদের জীবন নিজের হাতে নিয়েছিলেন?

শেষ ১২ ঘণ্টার গল্প: গ্যাস স্টেশনে কেনাকাটা ও নিখোঁজ

৮ মার্চের এক দিন আগে, নাজিরকে বস্টনে তার প্রেমিকাকে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে তিনি বিমান উঠেননি, পরে তার ফ্লাইট ৮ মার্চ সকালে পুনঃনির্ধারিত হয়।

জিবিআই মোবাইল ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে দেখেছে, বেল মাউন্টেনে যাওয়ার পথে তাদের সঙ্গী কেউ ছিল না। পরিবার চাইছে, সেই রাস্তায় থাকা সিসিটিভি ভিডিও প্রকাশিত হোক।

মৃত্যুর রাত ৭ মার্চ গভীর রাতে লরেন্সভিলের কাছে একটি শেল গ্যাস স্টেশনে তারা পানি, চিপস ও বিফ জারকি কিনেন। সেখানে একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পাম্পের কাছে তাদের গাড়ির দরজা খুলতে একটি বাস্কেটবল পড়ে যায় এবং একজন তা তুলে নেয়।

এরপর তারা গাড়িতে চড়ে অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর পাহাড়ের চূড়ায় তাদের মরদেহ পাওয়া যায়।

পরিবারের স্মৃতিতে কাদির-নাজির

কাদির ও নাজির অধিকাংশ সময় একসঙ্গে কাটিয়েছে। প্রিয় ভিডিও গেম ‘মর্টাল কমব্যাট’ খেলা, এনিমে দেখা – বিশেষ করে ‘টোকিও গুল’ ও ‘অ্যাটাক অন টাইটান’। তাদের বড় বোন কাই’রী পাওয়েল জানিয়েছেন, ‘তারা কখনো আমাকে একা দোকানে যেতে দেয়নি। স্কুল শেষে আমার ঘরে এসে আলাপ করত।’

বোনের সঙ্গে শেষ রাতটি কাটিয়েছে তারা। ৫ মার্চ রাতে তারা ‘রিক অ্যান্ড মর্টি’ দেখেছিল। ওই সময় বোনকে জিজ্ঞেস করেছিল তারা, ‘তুমি যদি ভয় না পেয়ে নিজের ইচ্ছেমতো কিছু করতে পারতে, কী করত?’ বোন বলেছিল নাচ। তারা তাকে উৎসাহ দিয়েছিল সেটা করার জন্য।

স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার

তাদের চোখ আর চুলের স্টাইলে পার্থক্য থাকলেও লক্ষ্য ছিল আলাদা। কাদির বিমান মেরামতের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলো, আর নাজির গাড়ি মেরামতের।

দুই ভাই মিলিতভাবে একটি অ্যাথলেটিক পোশাকের ব্র্যান্ড ‘ওভারকিল’ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল।

খালারা বলেছিলেন, ‘তারা এমন কাউকে চাকরি দিতে চাইতো না, নিজেদের কাজ করতেই চেয়েছিল।’

 

সূত্র: সিএনএন।

রাকিব

×