ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্ল্যাক ম্যাজিক শুধুই মিথ নাকি এর বিজ্ঞানসম্মত কোনো ব্যাখ্যা আছে?

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৩০ মে ২০২৫

ব্ল্যাক ম্যাজিক শুধুই মিথ নাকি এর বিজ্ঞানসম্মত কোনো ব্যাখ্যা আছে?

ছবি: সংগৃহীত

আপনি কি কখনও এমনটা অনুভব করেছেন—কেউ যেন আপনাকে অনুসরণ করছে, অথচ পেছনে ফিরে তাকালে কেউ নেই? কখনো কি শুনেছেন কোনো অদ্ভুত কণ্ঠস্বর, অথচ চারপাশে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা? কিংবা এমন কিছু দেখেছেন বা অনুভব করেছেন যা কোনো যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব?

যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হয় ‘হ্যাঁ’, তাহলে আপনি হয়তো এমন এক রহস্যময় শক্তির প্রভাবে রয়েছেন, যাকে আমরা চিনি “কালো জাদু” নামে—হাজার বছর ধরে মানবজাতিকে ভীত ও বিভ্রান্ত করে আসা এক অদৃশ্য শক্তি।

কালো জাদুর ধর্মীয় ভিত্তি ও ইসলামের ব্যাখ্যা
পবিত্র কোরআনে এবং হাদিসে কালো জাদুর অস্তিত্ব স্পষ্টভাবে স্বীকৃত। সূরা বাকারা-তে বলা হয়েছে:

“তারা সেই জিনিসের অনুসরণ করল যা সুলাইমানের রাজত্বকালে শয়তানরা আবৃত্তি করত… আর আল্লাহ বলেন, ‘হারুত ও মারুত’ নামে দুই ফেরেশতা বাবেল নগরীতে মানুষকে জাদুবিদ্যা শেখাতেন পরীক্ষা স্বরূপ।” (সূরা বাকারা, আয়াত ১০২)

এমনকি মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-ও একবার কালো জাদুর শিকার হয়েছিলেন। লাবিদ ইবনে আ’সাম নামে এক ইহুদি জাদুকর তাঁর ব্যবহৃত চিরুনি ও চুল নিয়ে খেজুর গাছের খোসায় মুড়িয়ে একটি কূপে নিক্ষেপ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে ১১টি গিঁটসহ এক সুতা উদ্ধার করা হয়। প্রতিটি গিঁট খুলতে খুলতে মহানবী (সা.) সূরা ফালাক ও নাস পড়েন, এবং ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

কালো জাদুর কুফল ও লক্ষণ
পবিত্র কোরআনে কালো জাদুর কুফল হিসেবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানোর উল্লেখ রয়েছে। বাস্তব জীবনেও দেখা যায়, হঠাৎ করেই—

  • ঘরে অশান্তি শুরু হয়
  • দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরে
  • চিকিৎসা করেও কোনো অসুখ সারে না
  • মানুষ মানসিক ভারসাম্য হারায়
  • কখনো রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে

এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে দেখা দিতে পারে:

  • শরীরে অজানা যন্ত্রণা বা দাগ
  • ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ ভাব ও আতঙ্ক
  • একটানা ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন
  • ব্যবসায় হঠাৎ পতন
  • মন অকারণে খারাপ, কান্না পাওয়া
  • মাথা ঘোরা, শরীর ভারী লাগা

এসব লক্ষণ অনেক সময় কালো জাদুর প্রভাবে ঘটে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ ও ধর্মীয় পণ্ডিতরা।

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কালো জাদু
অন্যদিকে, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এসব ঘটনা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলে—

  • হ্যালুসিনেশন: মানসিক চাপ বা বিষণ্নতা থেকে মস্তিষ্কে বিভ্রম সৃষ্টি হওয়া
  • সিজোফ্রেনিয়া: একধরনের মানসিক রোগ যা অলীক কণ্ঠ বা ভীতি তৈরি করে
  • স্লিপ প্যারালাইসিস: ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি অবস্থায় শরীর অচল হয়ে যাওয়া
  • ম্যাস হিস্টেরিয়া: সমষ্টিগত ভীতি বা বিশ্বাসের কারণে একাধিক মানুষের একইরকম মানসিক প্রতিক্রিয়া
  • অর্থাৎ, বিজ্ঞানের মতে, সব অভিজ্ঞতা কালো জাদুর ফল নয়—অনেক সময় এগুলো স্নায়বিক বা মানসিক রোগের অংশ হতে পারে।

ইসলামের নির্দেশনা ও প্রতিকারের উপায়
ইসলাম কালো জাদুর অস্তিত্বকে স্বীকার করে, তবে একইসাথে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়—আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউ কাউকে ক্ষতি করতে পারে না। রাসূল (সা.) বলেছেন: যে জাদু করে বা করায়, সে শিরক করে। (সহীহ হাদিস)

তাই মুসলমানদের জন্য করণীয় হলো—

  • প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা
  • রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ
  • তাহাজ্জুদের নামাজে আল্লাহর কাছে রক্ষা প্রার্থনা
  • শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
  • চিকিৎসায় ফল না পেলে বিশ্বস্ত রুহানি পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া

 আতঙ্ক নয়, সচেতনতা জরুরি
কালো জাদু হয়তো বাস্তব, তবে তাকে ঘিরে ভয় বা কুসংস্কারে ডুবে যাওয়া সমাধান নয়। সত্যিকারের শক্তি আসে আল্লাহর ওপর আস্থা, প্রাত্যহিক ইবাদত ও সচেতনতা থেকে। বিজ্ঞান এবং ধর্ম—দুয়ের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝে চললে, আমরা ভয় নয় বরং বিশ্বাসের আলোয় পথ চলতে পারি।

আপনার যদি আর কোনো সম্পাদনা বা নির্দিষ্ট অংশ যোগ করার অনুরোধ।

ফরিদ

×