
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় মানবিক বিপর্যয় নতুন এক ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, ইসরায়েল যদি ত্রাণ সহায়তা আটকে রাখা অব্যাহত রাখে, তাহলে অসংখ্য শিশু অপুষ্টিতে মারা যেতে পারে।
জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত গাজায় ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৭১ হাজার শিশুর মধ্যে চরম অপুষ্টি দেখা দিতে পারে। এদের মধ্যে ১৪ হাজার ১০০ শিশু মারাত্মকভাবে অপুষ্টিতে আক্রান্ত হবে।
এছাড়া, অন্তত ১৭ হাজার গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীও চরম অপুষ্টির শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অপুষ্টির ভয়াল প্রভাব কী?
অপুষ্টি শুধু খাবারের অভাব নয়—এটি শিশুর উচ্চতা, ওজন এবং মাথার পরিধির স্বাভাবিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য না রাখাকেও বোঝায়। মানবদেহের জন্য ১৭টি খনিজ অত্যাবশ্যকীয়। এর মধ্যে জিঙ্ক, আয়রন এবং আয়োডিনের অভাব সবচেয়ে বিপজ্জনক। এই উপাদানগুলোর ঘাটতি শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষয় বা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।
চরম অপুষ্টির কারণে শিশুর ওজন কমে যেতে থাকে, সংক্রমণ ও ডায়রিয়ার প্রতি তাদের সংবেদনশীলতা বাড়ে। এর ফলে শিশুর ওজন তার উচ্চতার তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি শিশুর বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশকে থামিয়ে দেয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়
অপুষ্ট শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে। তারা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার মতো সাধারণ রোগেও মৃত্যুর মুখে পড়ে। এর ফলে অপুষ্টি আরও গভীর হয়—একটি ভয়ানক চক্র শুরু হয়।
মস্তিষ্কের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব
জীবনের প্রথম ১ হাজার দিন—গর্ভধারণ থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত—শিশুর মস্তিষ্কের সবচেয়ে দ্রুত বিকাশ ঘটে। এই সময়ে অপুষ্টি হলে মস্তিষ্কে গঠনগত পরিবর্তন ঘটে। মস্তিষ্ক ছোট হয়, স্নায়ু কোষের ঘিরে থাকা মাইলিন কমে যায়—যা সংকেত প্রেরণে সাহায্য করে।
এর ফলে শিশুর চিন্তা-ভাবনা, ভাষা, মনোযোগ, স্মৃতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতায় স্থায়ী প্রভাব পড়ে। এই প্রভাব অনেক সময় আজীবনের জন্য থেকে যায়।
মায়ের অপুষ্টির ভয়াবহতা
গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের অপুষ্টি শুধু তাদের নিজের জন্য নয়, শিশুর জন্যও মারাত্মক। অপুষ্ট মা কম এবং কম পুষ্টিসম্পন্ন দুধ উৎপাদন করেন। দুধে আয়রন, আয়োডিন, ভিটামিন-এ ও জিঙ্কের ঘাটতি শিশুর বিকাশ ব্যাহত করে। মায়ের স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে স্তন্যদান ব্যাহত হয়।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ডাচ দুর্ভিক্ষের সময় জন্ম নেয়া শিশুদের ওপর গবেষণা বলছে—মায়ের অপুষ্টির সময় গর্ভে থাকা শিশুর হার্ট, ফুসফুস ও কিডনির বিকাশ ব্যাহত হয়।
এই শিশুরা পরবর্তী জীবনে সিজোফ্রেনিয়া, বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হয়েছে।
সূত্র: দ্য কনভারসেশন।
রাকিব