
ছবি: সংগৃহীত
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির সময় ফিলিস্তিনিরা যে নজিরবিহীন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল, তা ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে ‘প্রথম নাকবা’ নামে। লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে নিজ ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত করে এক নির্মম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়। এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে তখনই প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে ফিলিস্তিনিরা।
সে সময় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী নেতা আব্দুল আল কাদির আল হোসাইনী সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে যান, আরব লীগের কাছে অস্ত্র সহায়তার আবেদন নিয়ে। কিন্তু আরব দেশগুলো মুখ ফিরিয়ে নেয়। বাধ্য হয়ে তাকে খালি হাতে ফিরতে হয় জন্মভূমিতে। পরে সেই জন্মভূমি রক্ষার লড়াইয়ে জীবন দেন এই নেতা।
এরপর ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ঘটে বড় এক বিশ্বাসঘাতকতা, ১৯৭৮ সালে। আরব বিশ্বের তৎকালীন পরাশক্তি মিশর নিজেদের স্বার্থে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে যায়, যার নাম ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে মিশর ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয়। এমনকি স্বয়ং ইসরায়েলিরাও বিভিন্ন সময়ে বলেছে, তখনকার মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত পুরো ফিলিস্তিনকে বিক্রি করতেও প্রস্তুত ছিলেন।
১৯৮২ সালে আরও একবার ফিলিস্তিনিরা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়। ইসরায়েল যখন লেবাননের রাজধানী বৈরুতকে অবরুদ্ধ করে ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরগুলোতে নির্বিচার বোমাবর্ষণ শুরু করে, তখন মুসলিম দেশগুলো ছিল সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। এরপর ইসরায়েলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (PLO) নেতা ইয়াসির আরাফাতকে লেবানন ছাড়ার প্রস্তাব দেয় সৌদি আরবের তৎকালীন যুবরাজ। বিনিময়ে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেই প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে আরাফাত লেবানন ছাড়তে রাজি হন।
কিন্তু এর ফল হয় ভয়াবহ। আরাফাতের প্রস্থানের পর লেবাননের খ্রিস্টান মিলিশিয়া বাহিনী ফিলিস্তিনিদের উপর ব্যাপক গণহত্যা চালায়। ওই ঘটনায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া যায়। জাতিসংঘ পরে এটিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
সবশেষে ২০২০ সালে 'আব্রাহাম একর্ড' নামক চুক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, সুদান ও মরক্কো। এটি ছিল আরব বিশ্বের পক্ষ থেকে আরেকটি বড় ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা। বহু দশক ধরে যে সংগ্রাম ফিলিস্তিনিরা করে আসছিল, সেই সংগ্রামের চেতনার প্রতি এই চুক্তি ছিল সরাসরি আঘাত।
ফরিদ