
ছবি: সংগৃহীত
প্রতি বছর ৩১ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দিবসটির থিম ঘোষণা করেছে: “আবরণ উন্মোচন: তামাক ও নিকোটিন পণ্যের প্রতি আকর্ষণ তৈরিতে শিল্পের কৌশল ফাঁস করা”।
যদিও আমরা সবাই জানি, তামাক সেবন স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, তবুও কিছু জীবনযাপনধর্মী প্রবণতা ধূমপানকে আকর্ষণীয় করে তোলে। তাই এটি জানা অত্যন্ত জরুরি যে, তামাক ত্যাগ করলে কীভাবে শরীর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।
ধূমপান ছাড়লে শরীর কীভাবে সুস্থ হয়ে ওঠে
এক সাক্ষাৎকারে আলাইভ হেলথের পুষ্টিবিদ ও যোগ প্রশিক্ষক তানিয়া খান্না ব্যাখ্যা করেছেন, ধূমপান ত্যাগ করার মাত্র ২০ মিনিট থেকে ২০ বছরের মধ্যে শরীর কীভাবে নিরাময়ের পথে এগিয়ে যেতে থাকে।
তানিয়া বলেন, “তামাক ব্যবহার বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু ও অসুস্থতার অন্যতম প্রধান কারণ। তবে একজন ব্যক্তি যখনই তামাক ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন, শরীর তখনই নিজে নিজে নিরাময় প্রক্রিয়া শুরু করে এবং তা কয়েক দশক পর্যন্ত চলতে থাকে।”
তিনি জানান, ধূমপান ছাড়ার ২০ মিনিট, ১২ ঘণ্টা, ৯ মাস, ১০ বছর কিংবা ২০ বছর পরে শরীরের মধ্যে কী পরিবর্তন ঘটে এবং এই পরিবর্তনগুলোই একজন মানুষকে তামাক ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট হওয়া উচিত।
ধূমপান ছাড়ার ২০ মিনিট পর:
হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ স্বাভাবিক হতে শুরু করে। রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয়, যা ইঙ্গিত দেয় শরীর নিকোটিনের অনুপস্থিতিতে ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে।
১২ ঘণ্টা পর:
সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা ক্ষতিকর গ্যাস কার্বন মনোক্সাইড রক্ত থেকে বের হতে শুরু করে। ফলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের ওপর চাপ কমে।
২৪ ঘণ্টা পর:
মাত্র একদিনের মধ্যেই হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে শুরু করে। শরীর ধীরে ধীরে তামাক থেকে পাওয়া বিষাক্ত উপাদানগুলো বের করে দিতে থাকে।
৪৮ ঘণ্টা পর:
নিউরনের সংবেদনশীল অংশ বা স্নায়ু প্রান্তিক পুনরুজ্জীবিত হতে শুরু করে। ফলে স্বাদ ও গন্ধ গ্রহণের ক্ষমতা উন্নত হয়। এই সময়ের মধ্যে শরীর থেকে সব নিকোটিন বের হয়ে যায়, যা একটি বড় মাইলফলক।
১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে:
ফুসফুসের কার্যক্ষমতা অনেকটা বাড়ে। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সহজ হয়, শারীরিক সহনশীলতা বাড়ে এবং শরীরে শক্তি ফিরে আসে। রক্ত সঞ্চালন স্থিতিশীল হয় ও ফুসফুসের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৯ মাস পর:
ফুসফুসের ভেতরের ছোট ছোট কেশাগ্র নির্মাণ ‘সিলিয়া’ নতুন করে গঠিত হয় এবং স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে শুরু করে। এগুলো শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে, ফলে কাশি ও শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যা কমে।
১ বছর পর:
করোনারি হার্ট ডিজিজ বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ধূমপায়ী ব্যক্তির তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসে। হৃদপিণ্ড, রক্তনালী এবং ফুসফুস এই সময়ের মধ্যে আরও সুস্থ হতে থাকে।
৫ বছর পর:
স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার ঝুঁকি অনেক কমে আসে এবং অনেক সময় একজন অ-ধূমপায়ীর ঝুঁকির সমান হয়ে যায়। মুখ, গলা, খাদ্যনালী এবং মূত্রথলির ক্যানসারের ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
১০ বছর পর:
ফুসফুসের ক্যানসারে মৃত্যুর ঝুঁকি একজন ধূমপায়ী ব্যক্তির তুলনায় অর্ধেকে নেমে আসে। একইসঙ্গে ল্যারিনক্স (কণ্ঠনালী) ও অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকিও কমে যায়।
১৫ থেকে ২০ বছর পর:
এই পর্যায়ে এসে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একজন আজীবন অ-ধূমপায়ীর সমান হয়ে যায়। স্ট্রোকসহ বিভিন্ন ধরণের ক্যানসারের দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
তানিয়া খান্না বলেন, “তামাক ত্যাগ করা শুধু রোগ প্রতিরোধ নয়, বরং জীবনমান উন্নত করার বিষয়। যারা ধূমপান ছাড়েন, তারা সাধারণত ভালোভাবে শ্বাস নিতে পারেন, শরীরে শক্তি ফিরে পান, ত্বক আরও স্বাস্থ্যকর হয় এবং নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে নতুনভাবে নিয়ন্ত্রণ অনুভব করেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কখনোই খুব দেরি হয়ে যায় না। যত তাড়াতাড়ি ধূমপান ছাড়বেন, তত দ্রুত আপনি নিরাময়ের পথে এগোতে পারবেন।”
দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে রচিত। কোনো রোগ বা শারীরিক অবস্থার জন্য নির্ভরযোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
আবির