
অনিয়মিত মাসিক, মুখে বারবার ব্রণ ওঠা, শরীরে অতিরিক্ত লোম গজানো বা সন্তান নিতে সমস্যা হচ্ছে? এমন সমস্যাগুলো অনেক নারী প্রতিদিনের জীবনেই অনুভব করেন। কিন্তু জানেন কি, এগুলোর পেছনে একসাথে কাজ করে যেতে পারে দুটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোনজনিত সমস্যা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) এবং থাইরয়েড ডিজঅর্ডার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দুটি সমস্যা একসাথে দেখা দিলে শরীরে দেখা দেয় জটিল সব উপসর্গ। ভারতের রামাইয়া মেমোরিয়াল হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের প্রধান ডা. প্রমিলা কালরা জানিয়েছেন, “পিসিওএস এবং হাইপোথাইরয়েডিজম একসাথে থাকলে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা আরও গুরুত্বের সঙ্গে করতে হয়।”
কীভাবে যুক্ত পিসিওএস ও থাইরয়েড সমস্যা?
পিসিওএস হল এক ধরনের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, যার ফলে মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে, মুখে ও শরীরে লোম বৃদ্ধি পায় এবং গর্ভধারণে জটিলতা দেখা দেয়। অন্যদিকে, হাইপোথাইরয়েডিজম অর্থাৎ থাইরয়েড গ্রন্থি কম কাজ করলে শরীরে একাধিক হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এই সময় শরীরে TSH (Thyroid Stimulating Hormone) ও Prolactin বেশি তৈরি হয়, যা নারীর ওভুলেশন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এর ফলে ডিম্বাশয়ে সিস্ট গঠনের আশঙ্কা বেড়ে যায়— যা পিসিওএসের মূল লক্ষণ।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও মেটাবলিজমে প্রভাব
পিসিওএস এবং হাইপোথাইরয়েডিজম উভয় ক্ষেত্রেই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স দেখা যায়, যার ফলে শরীর ঠিকমতো ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না। এই সমস্যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং কোলেস্টেরল বেড়ে যায়। একসাথে এই দুই সমস্যা থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, হাইপোথাইরয়েডিজম নিয়ন্ত্রণে রাখলে ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি উন্নত হয় এবং মেটাবলিক ভারসাম্য ফিরে আসে।
কেন জরুরি সঠিক পরীক্ষা?
পিসিওএস ও থাইরয়েড সমস্যার উপসর্গ প্রায়ই একে অপরের সাথে মিলে যায়। তাই শুধু উপসর্গ দেখে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত নয়। পিসিওএস সন্দেহ হলে অবশ্যই থাইরয়েডের রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। এ ছাড়াও প্রয়োজন হতে পারে টেস্টোস্টেরন, DHEAS লেভেল ও ডিম্বাশয় ও থাইরয়েডের আলট্রাসনোগ্রাফি।
ডা. কালরা আরও বলেন, “একাধিক হরমোনজনিত সমস্যার সঠিক ডায়াগনোসিস না হলে চিকিৎসা কার্যকর হবে না। তাই উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।”
মিমিয়া