
প্রচণ্ড গরমে শরীর সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঘাম, পানিশূন্যতা ও দুর্বলতা মোকাবিলায় আমরা অনেকেই নির্ভর করি ঠান্ডা পানীয়, এনার্জি ড্রিংক বা তৎক্ষণাৎ আরামদায়ক খাবারের ওপর। তবে এসব সাময়িক স্বস্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই যদি আপনি একেবারে প্রাকৃতিক ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন সমাধান চান, তাহলে নজর দিন আপনার রান্নাঘরে থাকা সাধারণ কিছু মসলার দিকে। বহু প্রজন্ম ধরে ব্যবহৃত এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো শুধু শরীরকে ঠান্ডা রাখেই না, বরং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়াতে সাহায্য করে।
সাউফ
সাউফ আমাদের দেশীয় ঘরোয়া রান্নায় বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। এটি ঠান্ডা প্রকৃতির এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু বছর ধরে শরীরের অতিরিক্ত উত্তাপ কমাতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রাতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে সেই পানীয় পান করলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও হজম সহায়ক উপাদান শরীরকে toksin মুক্ত রাখে এবং গরমে হালকা অনুভূতি দেয়।
ধনে
ধনে গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক উপাদান। ধনে বীজ কিংবা পাতা উভয়ই দেহে ঠান্ডা প্রভাব ফেলে। ভিজিয়ে রাখা ধনে বীজের পানি কিংবা ছানার সঙ্গে ধনে মিশিয়ে খেলে তা দেহের অভ্যন্তরীণ উত্তাপ কমাতে সাহায্য করে। ধনে বীজে আছে ডিউরেটিক গুণ, যা শরীরের বাড়তি তাপ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। ধনে পাতার চাটনি বা সালাদ গরমে এনে দিতে পারে আরামদায়ক সতেজতা।
এলাচ
এলাচ শুধু খাবারে সুবাসই আনে না, এটি গরমকালে হজমতন্ত্র শান্ত রাখতে এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়ক। আয়ুর্বেদ মতে এলাচ একটি ‘ত্রিদোষিক’ মসলা, অর্থাৎ এটি তিন ধরনের দেহ প্রকৃতিকেই ভারসাম্য রাখে। গরমের সময় দুধ, শরবত বা খির জাতীয় মিষ্টিতে এলাচ মিশিয়ে খাওয়া শরীর ও মন দুটোই প্রশান্ত রাখে।
পুদিনা
পুদিনা গ্রীষ্মে ঠান্ডা অনুভূতি এনে দেয় এমন একটি সর্বজনপ্রিয় প্রাকৃতিক উপাদান। এতে রয়েছে মেনথল, যা শরীরে ঠান্ডা ভাব তৈরি করে এবং অতিরিক্ত গরমজনিত অস্বস্তি প্রশমনে সহায়তা করে। পুদিনা দিয়ে তৈরি লেবুর শরবত, চাটনি বা ঠান্ডা পানীয় শুধু তৃষ্ণা মেটায় না, শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডাও রাখে।
হলুদ
হলুদকে সাধারণত উষ্ণ প্রকৃতির মসলা হিসেবে ধরা হয়, তবে সামান্য পরিমাণে ব্যবহার করলে এটি শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। লিভার কার্যক্রম উন্নত করে বলে হলুদ শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। গ্রীষ্মে সংক্রমণ বা গরম-জনিত জ্বালা থেকে বাঁচতে হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও ডিটক্সিফায়িং গুণ কাজে আসে।
জিরা
জিরা হজম ও দেহের বিষাক্ত উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে, যা গরমে শরীর সুস্থ রাখতে অত্যন্ত জরুরি। জিরা ভেজানো পানি পান করলে শরীর ঠান্ডা থাকে, আবার ভাজা জিরা সালাদ বা রায়তায় মেশালেও তা গরমে শরীরকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে সহায়তা করে।
গরমে বারবার ঠান্ডা পানীয়ের দিকে না ঝুঁকে, প্রাকৃতিকভাবে শরীর ঠান্ডা রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যুক্ত করুন এই সাধারণ অথচ উপকারী মসলা ও ভেষজ উপাদানগুলো। এগুলো শুধু শরীরকে আরাম দেয় না, বরং দীর্ঘমেয়াদে আপনাকে সুস্থ রাখে ভিতর থেকে। গরমকে ভয় না পেয়ে আয়ুর্বেদিক এই পথেই খুঁজে নিন প্রশান্তির সমাধান।
সূত্র:https://tinyurl.com/ycxudd68
আফরোজা