
ছবিঃ সংগৃহীত
উচ্চ কোলেস্টেরলকে “নীরব ঘাতক” বলা হয়—এবং এর যথেষ্ট কারণও আছে। এটি ধীরে ধীরে রক্তনালিতে জমে হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহের ঝুঁকি বাড়ায়। অনেকেই মনে করেন, শুধু রক্তপরীক্ষার মাধ্যমেই কোলেস্টেরলের মাত্রা জানা সম্ভব। কিন্তু শরীর মাঝেমধ্যে ছোট ছোট ইঙ্গিত দেয়, যেগুলো আমরা ভুল ব্যাখ্যা করি বা একেবারে উপেক্ষা করি।
প্রতিটি ব্যথা বা অস্বস্তি যে কোলেস্টেরলের লক্ষণ তা নয়, তবে কিছু কম পরিচিত উপসর্গ রয়েছে যেগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার। নিচে এমন ৫টি উপসর্গ উল্লেখ করা হলো, যেগুলো উচ্চ কোলেস্টেরলের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
চোখের কোণায় হলদেটে ছোট ছোট দাগ
চোখের কোণের আশেপাশে ফ্ল্যাট, ছোট হলদেটে দাগ বা ফোলাভাব অনেক সময় বয়স বা ক্লান্তির লক্ষণ ভেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এগুলো আসলে কোলেস্টেরল জমে তৈরি হওয়া 'জ্যান্থেলাসমা'। এটি নিজে ক্ষতিকর না হলেও, শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমে থাকলে এমন দাগ দেখা দিতে পারে এবং এটি হৃদরোগের ঝুঁকির সূচক হতে পারে—even যদি অন্য কোনো উপসর্গ না থাকে।
পা ও পায়ের পাতায় ঝিমঝিম বা অবশ অনুভূতি
অনেকেই ভাবেন দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে বা স্নায়ুর সমস্যায় এই অনুভূতি হচ্ছে। কিন্তু উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে Peripheral Artery Disease (PAD) হতে পারে—যেখানে ফ্যাটি জমা রক্তপ্রবাহে বাধা দেয়। এতে পায়ে ঝিমঝিম, অবশভাব, পেশিতে টান, বা পোড়ার মতো জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে।
National Heart, Lung, and Blood Institute বলছে, এসব উপসর্গ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে কোলেস্টেরল দ্বারা ধীরে ধীরে ধ্বংস হওয়া ধমনির ইঙ্গিত দেয়।
কয়েক ধাপ সিঁড়ি উঠলেই ক্লান্তি বা ভারী লাগা
হালকা ব্যায়াম বা সিঁড়ি ওঠার পর হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বা পা ভারী লাগলে আমরা অনেক সময় বয়স বা ক্লান্তিকে দোষারোপ করি। কিন্তু এটি হতে পারে হৃদপেশিতে রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়ার লক্ষণ, যা প্লাক জমে ধমনি সরু হয়ে যাওয়ার কারণে ঘটে।
চেস্ট পেইনের মতো তীব্র নয়, কিন্তু এমন নিঃশব্দ ক্লান্তি বা ভারী ভাব হৃদপিণ্ডের পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।
চোখের কর্নিয়ার চারপাশে নরম ধূসর বৃত্ত
চোখের মণির চারপাশে নরম ধূসর রিং অনেক সময় বয়সজনিত স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি লিপিড বা চর্বি জমে তৈরি Arcus Senilis। বয়স্কদের মাঝে সাধারণ হলেও, যদি ৪৫ বছর বয়সের আগেই এটি দেখা দেয়, তবে সেটি Familial Hypercholesterolemia-র ইঙ্গিত হতে পারে—এটি একটি বংশগত অবস্থা যেখানে রক্তে বিপজ্জনকভাবে বেশি কোলেস্টেরল থাকে। বিশেষ করে পরিবারের কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এ ধরণের লক্ষণ দেখা দিলেই লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করানো উচিত।
অস্বাভাবিক বুকের অস্বস্তি — কিন্তু হৃদপিণ্ডে নয়
বুকের মাঝখানে নয়, বরং উপরের পেট, চোয়াল বা কাঁধের ফাঁকে ব্যথা বা চাপ অনেক সময় অ্যাসিডিটির জন্য দায়ী মনে হয়। কিন্তু উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদপিণ্ড ছাড়াও শরীরের অন্য অংশের ধমনি সরু করে দিতে পারে। ফলে অদ্ভুত ব্যথার ধরণ দেখা দিতে পারে, যেগুলো হৃদযন্ত্র-সংশ্লিষ্ট না হলেও আসলে সেখান থেকেই এসেছে। অনেক হৃদরোগীই জানিয়েছেন, হার্ট অ্যাটাকের আগের কয়েক সপ্তাহে এমন ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করেছেন।
সূত্রঃ টাইমস অব ইন্ডিয়া
নোভা